রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ গেল বহু মানুষের। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন স্কুলের কো-অর্ডিনেটর মাহরীন চৌধুরী (৪২), যিনি দগ্ধ শরীর নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। সোমবার (২১ জুলাই) বিকট বিস্ফোরণে ১০০ শতাংশ দগ্ধ হন তিনি এবং রাতেই ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুবরণ করেন।
মাহরীনের স্বামী মনছুর হেলাল জানান, দুর্ঘটনার মুহূর্তে মাহরীন শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টায় ছিলেন। “বাচ্চারা যেদিক দিয়ে বের হওয়ার কথা ছিল, সেখানেই বিমানটি এসে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ হয়,” বলেন তিনি। “তবুও মাহরীন কয়েকজন শিশুকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।”
আইসিইউতে স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথোপকথনের স্মৃতি তুলে ধরে মনছুর হেলাল বলেন, “আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি কেন নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেললে? উত্তরে সে বলেছিল, ‘আমার চোখের সামনে আমার বাচ্চারা পুড়ে মারা যাচ্ছে, আমি কীভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি?’” এরপর দ্বিতীয় একটি বিস্ফোরণে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন।
আরও পড়ুন
লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে মাহরীন স্বামীকে বলেন, “আমার ডান হাতটা শক্ত করে ধরো।” কিন্তু পুরো হাত পুড়ে যাওয়ায় স্পর্শ করা সম্ভব ছিল না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, “তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না। আমার বাচ্চাদের দেখে রেখো।” এই কথার জবাবে স্বামী বলেন, “তোমার বাচ্চাদের এতিম করে চলে যাচ্ছ?” মাহরীন তখন বলেন, “ওরাও তো আমার বাচ্চা। সবাই পুড়ে মরছে—আমি কীভাবে তাকিয়ে থাকি?”
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। বিমানটি ছিল বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই মডেলের একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। এটি সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে এবং মাত্র ১২ মিনিট পর মাইলস্টোন স্কুল ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়।
এই দুর্ঘটনায় মাহরীন চৌধুরীর মতো সাহসী মানুষরা তাদের কর্তব্য ও মানবিকতার যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে জাতির হৃদয়ে।