৩৪ বছরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ৩২টি বিমান দুর্ঘটনা

32 plane crashes in bangladesh air force in 34 years

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান (এফ-৭ বিজিআই) বিধ্বস্ত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২১ জুলাই, ২০২৫) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়নের কিছু সময় পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরেই বিধ্বস্ত হয়। এতে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ, যাদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দুর্ঘটনার পরপরই এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং স্কুল ভবনের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতি দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং হতাহতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উদ্ধারকারী দল তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করে।

Image 566294 1753101415

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, এ পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত ৮৩ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার মাত্রা ও প্রাণহানির দিক থেকে এটি একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইতিহাসে ১৯৯১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নানা ধরণের বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যুদ্ধবিমান, প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বহু ফ্লাইট ক্যাডেট, স্কোয়াড্রন লিডার এবং প্রশিক্ষক পাইলট প্রাণ হারিয়েছেন। পিটি-৬, ইয়াক-১৩০, এল-৩৯ ও এফ-৭ টাইপের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধবিমানগুলোই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। ১৯৯১ সালের ৩০ এপ্রিলের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে একদিনেই বাহিনীর ৪০টি এফ-৬ যুদ্ধবিমান এবং ৪টি মিল-৮ হেলিকপ্টার সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়, যা ছিল একক বৃহত্তম ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা। সদ্য সংঘটিত উত্তরার দুর্ঘটনা এই তালিকায় একটি ব্যতিক্রমী ও হৃদয়বিদারক সংযোজন, যেখানে একটি যুদ্ধবিমান সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিধ্বস্ত হয়ে বহু শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

সাম্প্রতিক সময়েও দুর্ঘটনার ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৪ সালের ৯ মে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ নিহত হন। ২০১৮ সালে টাঙ্গাইলে রকেট অনুশীলনের সময় এফ-৭ বিজি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান এক পাইলট। একই বছর কে-৮ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দুই পাইলট নিহত হন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে পিটি-৬, এল-৩৯, এফ-৭এমবি, এ-৫সি ও মিগ-২১ সহ একাধিক যুদ্ধবিমান ও প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে।

২০০০-এর দশকেও একাধিক দুর্ঘটনায় বিমান বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০০২ সালে কক্সবাজারের উখিয়ায় এমআই-১৭ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে চারজন নিহত হন। ২০০৫ সালে এফ-৭এমবি যুদ্ধবিমান উত্তরায় একটি বহুতল ভবনের সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে। এছাড়া, ২০১০ সালে বরিশালে পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দুই স্কোয়াড্রন লিডার নিহত হন। প্রতিটি দুর্ঘটনা শুধু সম্পদ নয়, দুর্লভ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সামরিক জনশক্তির অপূরণীয় ক্ষতির স্মারক হয়ে রয়েছে। নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিষয়টি এ প্রেক্ষাপটে নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে।

আরও দেখুন:

whatsappচ্যানেল ফলো করুন

প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Gif final ezgif.com optimize