পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রহ.) মাজার আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। এবার মাজারের বর্তমান হিসাবরক্ষক মো. সোহাগ মল্লিকের বিরুদ্ধে এক নারীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। মোসা. সালমা বেগম নামের এক নারী জেলা প্রশাসক ও ওয়াকফ প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে সোহাগের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন, গর্ভপাত ঘটানো এবং আইনি স্বীকৃতি থেকে সরে যাওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
অভিযোগকারীর ভাষ্য অনুযায়ী, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এই সুযোগে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হিসাবরক্ষক সোহাগ মল্লিক তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন। তিনি ঢাকায় বাসা ভাড়া নেন এবং বরিশালেও একসঙ্গে থাকেন। একপর্যায়ে সালমা গর্ভবতী হয়ে পড়েন, কিন্তু সোহাগ ওষুধ খাইয়ে গর্ভপাত ঘটান। এখন বিয়ে না করে সালমাকে তার বয়স ও অতীত জীবন নিয়ে অপমান করছেন বলে অভিযোগ।
সালমা বেগম আরও দাবি করেন, তারা প্রায় তিন বছর স্বামী-স্ত্রীর মতো জীবনযাপন করেছেন। এখন সোহাগ প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গিয়ে প্রতারণা করছেন, যা নারীর অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। অভিযোগের সঙ্গে পাঁচজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যও সংযুক্ত করা হয়েছে, যারা ওই সম্পর্কের বিভিন্ন পর্যায়ের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন
এটাই প্রথম নয়—স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও সোহাগ মল্লিকের বিরুদ্ধে নারী সংক্রান্ত চারটি অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে একটি মামলা এখনও আদালতে চলমান রয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে মাজারের দানবাক্সের টাকা আত্মসাৎ, ঘুষের বিনিময়ে দোকান বরাদ্দ, জাল ভাউচারে কেনাকাটা এবং অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে জমা হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, প্রশাসনিক প্রভাব এবং প্রভাবশালী পরিবারের ছায়ায় থেকে সোহাগ এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তার বাবা একজন সরকারি গাড়িচালক এবং তিনি মাজার কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ। ফলে কেউ সহজে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। তবে সোহাগ মল্লিক তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে, দয়া করে আমাকে ধ্বংস করবেন না।” এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
স্থানীয় এক প্রবীণ নাগরিক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “যে জায়গাটি মানুষের ধর্মীয় আস্থার কেন্দ্র, সেখানে যদি এমন অভিযোগ উঠে—সাধারণ মানুষ আশ্রয় খুঁজবে কোথায়?” বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী।