ময়মনসিংহে পারিবারিক বিরোধ ও সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন এক ওমানপ্রবাসী। নিহতরা হলেন—রওশন আরা (৪৫) ও তার স্বামী রাকিবুল ইসলাম রাকিব (৫৪)। মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে নগরীর গুলকীবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাসায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, পরকীয়া সন্দেহ এবং সম্পত্তিগত বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার পর নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। রওশন আরার লাশ পরিবারের সদস্যরা গ্রহণ করলেও রাকিবের লাশ প্রথমে তার দুই মেয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে রাকিবের ভাই রেজাউল করিমের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় নগরজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ওমান থেকে ফিরে রাকিব সম্প্রতি পরিবারে ফের মিলনের চেষ্টা করেন। তবে তার স্ত্রীর কাছ থেকে তালাকনামা পাওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাকিবের প্রথম স্ত্রী থেকে বিবাহবিচ্ছেদের পর রওশন আরার সঙ্গে তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির দুই কন্যা রয়েছে। বড় মেয়ে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ছোট মেয়ে ময়মনসিংহে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করছে।
আরও পড়ুন
রাকিবের একাধিক বন্ধু ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তিনি দীর্ঘদিন ওমানে প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন এবং উপার্জনের প্রায় সবটাই স্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন। এমনকি স্ত্রীর নামে জমিও কিনে দেন। কিন্তু সম্প্রতি স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা পোস্ট দিতে থাকেন। এতে তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যায়।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শিবিরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার দিন রাকিব ধর্মীয় পোশাক পরে স্ত্রী রওশন আরার বাসায় প্রবেশ করেন এবং তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পাশের কক্ষে সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। ঘটনার সময় ছোট মেয়ে বাসায় থাকলেও সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তাই তার কাছ থেকে এখনো বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।” পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে এবং সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আকতার উল আলম জানান, “ঘটনাস্থলে জেলা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার একটি দলও কাজ করছে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।”