বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে নতুনভাবে চালু হতে যাওয়া ‘যাত্রীর তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা’ (Passenger Data System) পরিচালনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলি আলহামুদি। অভিযোগ উঠেছে, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের ৩৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি নিজেই, যা স্বার্থের সংঘাত এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, যাত্রীদের তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘এমিরেটস টেকনোলজি সলিউশনস’ (ইটেক)। আর এই প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের কিছু কাজ সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছে দুবাইভিত্তিক একটি কোম্পানিকে, যার নাম আইডেন্টিমা। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম শেয়ারহোল্ডার ও ব্যবস্থাপক হিসেবে রয়েছেন রাষ্ট্রদূত আলহামুদি।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “রাষ্ট্রদূতের মতো একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার পক্ষে কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রকল্পে সরাসরি শেয়ার মালিক হওয়া স্পষ্টত স্বার্থের সংঘাত। এটি শুধু নৈতিক নয়, কূটনৈতিক শিষ্টাচারেরও পরিপন্থী।” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “এই বিনিয়োগের উৎস কী? এর জন্য কি সংশ্লিষ্ট সরকারের অনুমোদন ছিল?”
আরও পড়ুন
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে যখন আলহামুদি বাংলাদেশে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ছিলেন, তখনই আইডেন্টিমা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ঠিক তখনই আইডেন্টিমা প্রকল্পের দায়িত্ব পায়। প্রতিষ্ঠানটিতে আরও দুই বাংলাদেশি নাগরিক অংশীদার হিসেবে রয়েছেন— মুনতাসির বিল্লা শাহরিয়ার ও সাজেদ আহম্মাদ সামি। এদের মধ্যে শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে প্রশ্ন উঠছে, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে আইডেন্টিমা এবং ইটেক এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্পে নিয়োজিত হলো। পরবর্তীতে আইডেন্টিমা চুক্তি করে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত সফটওয়্যার কোম্পানি সিটা’র সঙ্গে, যাদের ব্যবস্থাপনায় এই প্রযুক্তি পরিচালিত হচ্ছে। তবে সিটা’র প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশে প্রতি যাত্রী থেকে আদায় করা হচ্ছে ৪ ডলার, যেখানে আইসিএও’র সুপারিশ ৩.৫০ ডলার এবং আমিরাতে একই সেবার জন্য ফি নির্ধারিত ১.৫০ ডলার।
এই অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ শেষ পর্যন্ত সাধারণ যাত্রীদের ওপর পড়বে, বিশেষ করে বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য এটি আর্থিকভাবে একটি বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি ঘিরে সরকারের অবস্থান এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে জবাবদিহিতার দাবি উঠতে শুরু করেছে।