ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য চলছে। গত তিন বছরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মধ্যে অন্তত ১৮ বার চিঠি চালাচালি হয়েছে। যদিও টার্মিনালটির উদ্বোধন এ বছরের শেষের দিকে নির্ধারিত, সেখানে এখনো মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ শুরুই হয়নি।
বেবিচক চাইছে, তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো তৈরি করাতে। তবে অ্যামটব এবং বিটিআরসি একমত যে, প্রচলিত আইন অনুযায়ী কেবল লাইসেন্সধারী মোবাইল অপারেটররাই এই কাজ করতে পারে। অ্যামটবের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন’ অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কেউ মোবাইল নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি স্থাপন বা পরিচালনা করতে পারে না। অন্যদিকে বিটিআরসিও বেবিচককে জানিয়ে দিয়েছে, আইনগতভাবে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে এ ধরনের কাজ করানো সম্ভব নয়।
২০২৩ সালে তৎকালীন সরকার তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করে জানিয়েছিল, ২০২৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ এটি পুরোপুরি চালু হবে। অথচ মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় উদ্বোধনের সময়সীমা ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অপারেটরদের মতে, পূর্ণাঙ্গ নেটওয়ার্ক স্থাপনে অন্তত ২১ সপ্তাহ সময় লাগবে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে যখন জানা গেছে, বেবিচক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষকে দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা করছে এবং অপারেটরদের কাছ থেকে রাজস্ব ভাগাভাগির কথাও তুলেছে।
আরও পড়ুন
অ্যামটব বলছে, দেশে যত সরকারি অবকাঠামো গড়ে উঠেছে—মেট্রোরেলসহ—সবখানেই নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী চারটি মোবাইল অপারেটরই নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ করেছে। ফলে বিমানবন্দরেও সেই নিয়ম অনুসরণ করা উচিত। এ ছাড়া রাজস্ব ভাগাভাগি সংক্রান্ত নতুন প্রস্তাব বিদ্যমান নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
প্রযুক্তি খাতের বিশ্লেষকদের মতে, বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর ও জনবহুল এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সেবা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। এর জন্য অপারেটরদের সঙ্গে পরিকল্পিত সমন্বয় দরকার ছিল। বর্তমানে স্পেকট্রাম বা নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের সুযোগ না থাকায় চারটি অপারেটরের জন্য পৃথক অবকাঠামো গড়াই একমাত্র কার্যকর সমাধান বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।