আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুমের ঘটনা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিশন তাদের দ্বিতীয় প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, র্যাবের এক কর্মকর্তা ‘অপারেশনের’ পর প্রাপ্ত অর্থ গ্রামের মসজিদে দান করেছেন বলে স্বীকার করেছেন, যা গুমের মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটনের পরবর্তী আচরণ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট গঠিত এই পাঁচ সদস্যের কমিশন ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত ১৫ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গুমের ঘটনা বিশ্লেষণ করে কমিশন বলছে, এটি ছিল একটি ‘পদ্ধতিগত সমস্যা’, যা কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত অসদাচরণের চেয়েও বড় এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতির অংশ।
কমিশনের তথ্যমতে, তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ১,৮০০টি গুম সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছে। এসব ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও কর্মকর্তাদের মধ্যে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হতো। অপরাধ করে অনেক সময় অভিযুক্তরা প্রশংসিতও হতেন, যা ব্যবস্থার ভেতরে নিরব সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।
আরও পড়ুন
একটি ঘটনায় দেখা যায়, সেনাবাহিনী থেকে র্যাবে প্রেষণে আসা এক কর্মকর্তা গুমে জড়িত থাকার পরও তৎকালীন র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ তাকে ‘দক্ষ কর্মকর্তা’ হিসেবে প্রশংসা করেছিলেন। কমিশনের কাছে জবানবন্দিতে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনি নতুন প্রেষিত সেনা কর্মকর্তাদের নিরস্ত্র মানুষ হত্যা না করার বিষয়ে বারবার সতর্ক করতেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শুধু র্যাব নয়, পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারাও ঊর্ধ্বতনদের চাপ ও নির্দেশে জাল নথিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হতেন এবং গোপনে এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়তেন। এসব তথ্য একটি গভীর বাস্তবতা তুলে ধরেছে—যেখানে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিত্যনৈমিত্তিক অংশে পরিণত হয়েছিল।