বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটে থাকা বাংলাদেশের জন্য ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই এখন নেতিবাচক, এমন অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি এ সংকটকে আরও গভীরতর করতে পারে বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
তারা বলেন, যদিও ইরান ও ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক সীমিত, তবে এই যুদ্ধ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরি করলে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে তিনটি প্রধান খাতে—জ্বালানি, বৈদেশিক শ্রমবাজার এবং পণ্য আমদানি। বিশেষত, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটতে পারে।
ইতোমধ্যে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে। এই প্রণালিটি পারস্য উপসাগর থেকে বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ পথ। বাংলাদেশের জ্বালানি, খাদ্য ও সারসহ মোট আমদানির ৩০ শতাংশ এই পথ দিয়ে আসে। ফলে এটি বন্ধ হলে দেশে জ্বালানির দাম বেড়ে যাবে, বাড়বে উৎপাদন ব্যয়, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও তীব্র করবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরী বলেন, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও প্রকট হবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকেই বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় পায়, যা সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতি এনেছে। কিন্তু সেখানে অস্থিরতা বাড়লে রেমিট্যান্স কমে যেতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, যুদ্ধের পরিণতি শুধু তেলের দামে নয়, শ্রমবাজারেও কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সরাসরি প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত হতে পারে। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। ইরানের সঙ্গে কিছুটা আছে। তবে এই যুদ্ধে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নেবে না বলেই প্রত্যাশা।”
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ও ইরান একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করলেও তা কার্যকরভাবে অগ্রসর হয়নি। তবে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও ওমানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে অস্থিরতা তৈরি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমুখী চাপে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।