চাকরির লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশিদের রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের মূলহোতা মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ১২ জুন চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির মানব পাচার প্রতিরোধ শাখা।
সিআইডি জানিয়েছে, চক্রটি মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনের মিথ্যা প্রলোভনে লোকজনকে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির চাকরির কথা বলে প্রথমে সৌদি আরবে পাঠায় ওমরাহ ভিসায়। পরে সেখান থেকে তাদের রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক ‘সুলতান’ নামের ব্যক্তির মাধ্যমে রুশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাধ্যতামূলকভাবে অংশ নিতে বলা হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে না চাইলে ভুক্তভোগীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো। এমনকি খাবার বন্ধ করে দিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার চেষ্টাও করা হয়। সিআইডি জানায়, এই প্রক্রিয়ায় নাটোরের সিংড়ার হুমায়ুন কবির নিহত হন এবং ঢাকার আমিনুল নামে একজন গুরুতর আহত হন। পালিয়ে আসা একজন ভুক্তভোগী মো. আকরাম হোসেন দেশে ফিরে এসে পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর আমিনুলের স্ত্রী বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন
সিআইডি আরও জানায়, ওই চক্রের আরেক সদস্য ফাবিহা জেরিন ওরফে তামান্নাকে ৫ ফেব্রুয়ারি নেপাল পালানোর সময় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বনানীর ‘ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’-এর অংশীদার।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, চক্রটি ইতোমধ্যে ৫০ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন ভিসায় রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। এর মধ্যে গত এক বছরে ১১ জনকে সেনা ক্যাম্পে কাজের কথা বলে পাঠিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। রাশিয়ায় নিহতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে সিআইডি নিশ্চিত করেছে।
মানব পাচারের এই ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে সিআইডি ইতোমধ্যে ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে। ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। একইসঙ্গে এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।