কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় অন্তরা আক্তার (২৫) নামে সৌদি আরব ফেরত এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পারিবারিক কলহের জেরে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত অন্তরা এক পুত্র সন্তানের জননী ছিলেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, রবিবার রাতে অন্তরা তার তিন বছর বয়সী ছেলে জামাল হোসেনকে নিয়ে নিজের শোবার ঘরে ঘুমাতে যান। পরদিন ভোরে অন্তরার মা সুবর্ণা আক্তার তার নাতি জামালকে ঘরের বারান্দায় একা হাঁটাহাঁটি করতে দেখেন। এসময় তিনি অন্তরাকে ডাকাডাকি করেও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাননি। পরে পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে অন্তরার নিথর দেহ ঘরের তীরের সঙ্গে নিজের ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলতে দেখেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, অন্তরার জীবন ছিল সংগ্রামে পরিপূর্ণ। প্রায় পাঁচ বছর আগে কিশোরগঞ্জের হাবিবুর রহমান সালামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের দুই বছর পর অন্তরা জানতে পারেন, তার স্বামী গোপনে আরেকটি বিয়ে করেছেন। এটা জানার পর শিশুপুত্রকে নিয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং উপায়ান্তর না দেখে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন।
আরও পড়ুন
সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং পরিবারকে आर्थिकভাবে সহায়তা করতে অন্তরা সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে কয়েক বছর কর্মরত থাকার পর গত দুই মাস আগে তিনি ছুটিতে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পরও তিনি পারিবারিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন বলে তার বাবা কামাল হোসেন জানান। তিনি আরও বলেন, রবিবার রাত ১১টা থেকে ভোর সাড় ৫টার মধ্যে কোনো এক সময় অন্তরা এই চরম সিদ্ধান্ত নেন।
খবর পেয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এ ঘটনায় নিহত তরুণীর বাবা কামাল হোসেন বাদী হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন। তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার মেয়েটা অনেক কষ্ট নিয়ে দুনিয়া থেকে চলে গেল।”
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, উপপরিদর্শক (এসআই) আবু হাচানাত জানান, “প্রাথমিকভাবে লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এটি একটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।”