সিলেটের ওসমানীনগরের সীমান্তবর্তী গ্রাম উত্তর কালনীরচরে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত খালিদ মিয়ার মৃত্যুর পর তার পরিবারে নেমে এসেছে চরম মানবিক বিপর্যয়। চার সন্তানের জননী নাছিমা বেগম স্বামী হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। দুই মাসের শিশু সাইমকে কোলে নিয়ে, অপর তিন সন্তানকে পাশে বসিয়ে বিলাপ করতে করতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। স্বামী-হারানো এই নারী এখন দিশেহারা, সন্তানদের মুখে আহার জোগাতে কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি।
নিহত খালিদ মিয়াকে গত ৩১ মে সকালে নিজ বাড়ির আঙিনায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হত্যাকাণ্ডটি জগন্নাথপুর থানার আওতাধীন এলাকায় ঘটলেও এর পেছনে ছিল ওসমানীনগরের উত্তর কালনীরচর গ্রামের দীর্ঘদিনের গোষ্ঠীগত বিরোধের জের। পূর্ব শত্রুতা, বাজারের আধিপত্য, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ এবং মসজিদের উন্নয়নকাজকে কেন্দ্র করে এ সংঘাত গত এক বছর ধরে চলে আসছিল।
স্থানীয় সূত্র ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল হক ছানু ও লোকমান মিয়ার গোষ্ঠীর সঙ্গে বিলাল মিয়া, মোবারক হোসেন মেন্দি, জুনাইদ মিয়া ও ছুরুক মিয়ার গোষ্ঠীর মধ্যে এই বিরোধ দিন দিন ভয়াবহ রূপ নেয়। বছরজুড়ে হামলা, মামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বারবার সংবাদ সম্মেলন করে সহযোগিতা চাওয়া হলেও উচ্চমহলে বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি।
আরও পড়ুন
হত্যাকাণ্ডের পর পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রতিপক্ষের হামলা, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় নারীরা রাত কাটাচ্ছেন পাশের গ্রামে তাঁবু টানিয়ে। ইতোমধ্যে ৩০টির বেশি বসতঘর, ফসল, স্বর্ণালংকার ও অর্থসম্পদ লুটে নেওয়া হয়েছে, যা নদী বা হাওড়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, গ্রামে বিরাজ করছে চরম নিরাপত্তাহীনতা।
এ অবস্থায় এলাকাবাসী প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জগন্নাথপুর থানার ওসি মাহফুজ ইমতিয়াজ জানান, যেহেতু ঘটনাটি দুই উপজেলায়, যৌথভাবে তদন্ত চলছে। তবে লুটপাটের ঘটনায় তার থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অপরদিকে ওসমানীনগর থানার ওসি মোনায়েম মিয়া জানান, উভয় পক্ষই হামলা-ভাঙচুরে জড়িত, কিন্তু এখনো থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকলেও স্থানীয়রা স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।