আসন্ন ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই প্রথম বাজেটের আকার কমানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেট ঘোষণার মাধ্যমে আজ সোমবার বিকেল ৩টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, যা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
কর বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও বিলাসপণ্যের
নতুন বাজেটে রাজস্ব আদায় বাড়াতে বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর শুল্ক, ভ্যাট, সারচার্জ এবং উৎসে কর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ফলে ফ্রিজ, এসি, দেশীয় মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল, বিদেশি কসমেটিকস, খেলনা, চকলেট, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী, ব্লেড, টেবিলওয়্যারসহ অনেক পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এসি ও ফ্রিজে বর্তমানে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে, যা দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। একইভাবে দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে ২ থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত।
উন্নয়ন ব্যয়ে কাটছাঁট, পরিচালন ব্যয় বাড়ছে
বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা চলতি বছরের চেয়ে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। তবে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা কম। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও (এডিপি) কাটছাঁটের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন
বিদেশি পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়বে
বিদেশি কসমেটিকস ও খেলনার আমদানি শুল্ক মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, লিপস্টিক আমদানিতে শুল্ক মূল্য ২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হতে পারে। একইভাবে বিদেশি চকলেটের ন্যূনতম শুল্ক মূল্য বাড়িয়ে ১০ ডলার করার প্রস্তাব থাকছে। এসব পরিবর্তনের ফলে এসব বিলাসপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাড়তি করের আওতায় আরও কিছু পণ্য ও সেবা
প্লাস্টিকের কাপ-প্লেট, ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার, নির্মাণ উপকরণ, দরজার তালা, মার্বেল-গ্রানাইট, কপি পেপার ও ফুড সাপ্লিমেন্টের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কনফারেন্স সেন্টার ও কনভেনশন হলের সেবার ক্ষেত্রে উৎসে কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব রয়েছে। বাণিজ্যিক যানবাহনের অগ্রিম কর এবং ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর সারচার্জ বাড়ানো হচ্ছে। এমনকি মোবাইল ফোন টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানির ইনকাম থেকেও ২০ শতাংশ হারে কর কাটা হতে পারে।
সংকোচিত বাজেট বাস্তবায়নে গুরুত্ব পাচ্ছে করসংক্রান্ত সংস্কার
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেটের আকার কমানোর লক্ষ্য একদিকে মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যয় হ্রাস, অন্যদিকে বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য রাখার প্রয়াস। আয় বৃদ্ধির জন্য কর ব্যবস্থা সংস্কার এবং রাজস্ব খাতে জোরদার নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন পণ্যের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপানো হচ্ছে, যার প্রভাব সাধারণ ভোক্তার ওপর পড়তে পারে।