বাংলাদেশে মানব পাচার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ৪ হাজার ৫০০-এর বেশি মানব পাচার মামলার নথিভুক্ত হলেও, দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন মাত্র ১৫৭ জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারহীনতার ফলে পাচারকারীরা বারবার একই অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
প্রবাসে কর্মসংস্থানের প্রলোভনে পড়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা প্রতারিত হচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। দালাল ও কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি উন্নত জীবনের আশ্বাস দিয়ে তাঁদের থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের লিবিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে নিয়ে গিয়ে অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়। পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায়ের পর তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানব পাচার দমনে সরকারের উদ্যোগে ঘাটতি রয়েছে। অভিবাসন খাতে দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধে প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। অনেক দেশ ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে কর্মী গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে। বিএমইটি’র তথ্য মতে, গত এক দশকে ওমান, ইরাক, সুদান, মিসরসহ একাধিক দেশে শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ট্রাফিকিং ইন পারসনস’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের বিষয়টি বিশেষভাবে উঠে এসেছে। বিষয়টি সম্প্রতি দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও আলোচিত হয়। বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীরের মতে, শুধু দেশীয় আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
অন্যদিকে, সরকারি হিসেবে দেখা গেছে, ২০১৯–২০২৫ সময়কালে ১৯ হাজারের বেশি মানব পাচার অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও বিচারিক প্রক্রিয়ায় মাত্র ১৫৭ জন সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। বাকিরা খালাস পেয়ে গেছেন। মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, এত কম শাস্তির হার পাচারকারীদের উৎসাহিত করছে।
সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, পাচার ও দালাল সিন্ডিকেট দমনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও প্রবাসী কর্মসংস্থান ব্যুরো (বিএমইটি) যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বাস্তবতা বলছে, মাঠপর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ এখনো অনুপস্থিত। বিশ্লেষকদের মতে, মানব পাচার রোধে শক্তিশালী আইনি কাঠামো, সচেতনতা এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় অপরিহার্য।