বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখি, কোনো কোনো বন্দিকে স্বল্প সময়ের জন্য মুক্তি দিয়ে জানাজায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এধরনের সাময়িক মুক্তিকে বলা হয় “প্যারোল”। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে—এই প্যারোল আসলে কী? কাদের দেওয়া হয়, কীভাবে কার্যকর হয়, এবং এর আইনগত ভিত্তি কী?
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণধর্মী ভিডিওতে প্যারোল ব্যবস্থার আইনি কাঠামো, নীতিমালা ও ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। “প্যারোল” শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ‘প্যারাবোলা’ থেকে, যার অর্থ ‘বক্তব্য’ বা ‘প্রতিশ্রুতি’। পরবর্তীতে এটি ইংরেজি ভাষায় অর্থ পায়—নির্দিষ্ট শর্তে বন্দিকে সাময়িক মুক্তি।
বাংলাদেশে সাধারণ কয়েদি বা হাজতির জন্য পৃথক কোনো প্যারোল আইন না থাকলেও ২০১৬ সালের ১ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা একটি নীতিমালা অনুসারে প্যারোল কার্যকর করা হয়। এছাড়া বর্ডার গার্ড ও কোস্ট গার্ড আইনেও সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্যারোলের বিধান রয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, প্যারোল শুধুমাত্র সাময়িক মুক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং তা মূলত দুটি কারণে দেওয়া যায়: নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু অথবা আদালতের নির্দেশ বা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। আত্মীয় বলতে এখানে বাবা-মা, সন্তান, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী এবং শ্বশুর-শাশুড়িকে বোঝানো হয়েছে।
প্যারোলের মেয়াদ সাধারণত ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে, তবে সরকার চাইলে এই সময়সীমা বাড়াতেও পারে। প্যারোলে মুক্ত বন্দি সবসময় পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকেন এবং নির্ধারিত সময় শেষে তাকে কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তবে কিছু ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
নীতিমালায় নির্দিষ্ট ফরমেট না থাকলেও প্রচলিতভাবে একটি আবেদনপত্র জমা দিতে হয়, যেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত থাকে। এ থেকে স্পষ্ট, প্যারোল একটি মানবিক ও সীমিত আইনি ব্যবস্থা যা আইনগত কাঠামোর মধ্যেই প্রয়োগ করা হয় এবং এটি কেবল রাজনৈতিক বা ভিআইপি বন্দিদের জন্য নয়, বরং সাধারণ বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।