২০২৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে রেকর্ড পর্যায়ে। সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ বছর ৪,৮১৩ জন অভিবাসী শ্রমিকের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ বেশি। ‘রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (আরএমএমআরইউ)’ এই তথ্য উপস্থাপন করেছে ২৯ মে ঢাকায় আয়োজিত এক সংলাপে।
সংলাপে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী জানান, “এত তরুণ শ্রমিক কীভাবে এবং কেন মারা যাচ্ছেন, তা জানা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণে পোস্টমর্টেম করা সরকারের দায়িত্ব হওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না।” তিনি অভিযোগ করেন, অনেক ক্ষেত্রে মরদেহে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন থাকলেও, মৃত্যুসনদে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ উল্লেখ করা হয়, যা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, মৃত প্রবাসী শ্রমিকদের গড় বয়স মাত্র ৩৮ বছর, যা অত্যন্ত কম। বিশেষ করে, আরব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে মৃত্যুর গড় বয়স ইউরোপ বা উন্নত দেশগুলোতে কর্মরত নারীদের তুলনায় অন্তত ১০ বছর কম। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নারী শ্রমিকদের মধ্যে ৩২% মৃত্যু ‘অস্বাভাবিক’—যার মধ্যে দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা এবং খুন অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অনেকেই বিদেশে পা রাখার অল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করছেন। অথচ মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক অনিশ্চয়তা ও সন্দেহ। ৪৮% পরিবারের সদস্য বিশ্বাস করেন না যে মৃত্যুর সনদে উল্লিখিত কারণটি সঠিক। বিশেষ করে সৌদি আরবে আত্মহত্যার হার তুলনামূলকভাবে বেশি—২৪%।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, ঢাকার বিমানবন্দরে প্রবাসীদের মরদেহ গ্রহণের সময় অসংবেদনশীল ও মর্যাদাহীন আচরণের মুখোমুখি হন পরিবারের সদস্যরা। প্রায় ৮০% পরিবার মৃত্যুর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে জটিলতা ও হয়রানির শিকার হন। তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, “যথাযথ তদন্ত ও সম্মানজনক ব্যবস্থাপনা ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নেই। এই শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। তাই তাদের জীবন ও মৃত্যুকে সমান মর্যাদা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”