রাজশাহীর তানোর উপজেলার হিরানন্দপুর গ্রামের কৃষিশ্রমিক আবদুল জব্বার সরদার (৪৫) সাত বছর আগে জীবনের উন্নত আশায় সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তবে প্রবাসের স্বপ্ন ভেঙে পড়ে নেমে আসে দুঃস্বপ্ন। বিমানবন্দরেই দালালদের মাধ্যমে তাঁকে ‘ক্লিনার’ হিসেবে কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। তিন বছর পর খালি হাতে দেশে ফেরার পরিস্থিতিতে পড়েন তিনি।
পরবর্তীতে স্থানীয় এক প্রবাসীর সহায়তায় টাইলস কারখানায় কাজ পেয়ে সামান্য স্বস্তি পেলেও ২০২৩ সালের ১০ মে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন জব্বার। দীর্ঘ এক বছর সৌদি হাসপাতালে আইসিইউতে কাটিয়ে অবশেষে চলতি মাসের ২৬ তারিখে অচেতন অবস্থায় দেশে ফিরেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুন
জব্বারের স্ত্রী আদরি খাতুন জানান, স্বামীকে দেশে ফেরাতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ধর্ণা দিয়েছেন তিনি। অনেক অনুরোধ ও কান্নার পর তানোরের ইউএনওর সহায়তায় সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়। একপর্যায়ে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করলেও কোনও সহায়তা মেলেনি। শেষ পর্যন্ত ১৯ হাজার টাকার বিমান ভাড়াও সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
ঢাকায় প্রাথমিকভাবে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতেই সাত ঘণ্টায় খরচ হয় ৭০ হাজার টাকা। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ জানান, জব্বার এক বছর আইসিইউতে থাকায় চরম অপুষ্টিতে ভুগছেন। তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সফল অস্ত্রোপচারের পর হয়তো জ্ঞান ফিরতে পারে।
এদিকে স্বামীর চিকিৎসা ব্যয় চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন আদরি খাতুন। ঋণের বোঝা, চিকিৎসা খরচ আর সংসারের চাপ মিলিয়ে তাঁর জীবন এক দুঃসহ বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। তিনি এখন সরকারি সহায়তা এবং সহমর্মী মানুষের সহযোগিতার দিকে চেয়ে আছেন—যেন ভালোবাসার এই যুদ্ধ জিততে পারেন।