ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ চুরি একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে তিনটি লাগেজ চুরি বা গায়েব হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই অপতৎপরতা চালালেও কর্তৃপক্ষ এখনও তা পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেনি। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটছে—সে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা ও বিমান চলাচল বিশ্লেষকরা।
ওমরাহ শেষে দেশে ফেরা যাত্রী কাজী মোশতাক আহম্মেদ এই ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন। গত ৭ জানুয়ারি জেদ্দা থেকে ঢাকায় ফেরার পর তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগেজের অপেক্ষায় থাকলেও সেটি পাননি। পরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ বিভাগে অভিযোগ করে দীর্ঘ পাঁচ মাস পর তিনি মাত্র ১৯ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, যেখানে তার মালামালের প্রকৃত মূল্য ছিল প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
বিমান কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত ছয় মাসেই ৫৪০টির বেশি লাগেজ হারানোর অভিযোগ এসেছে। এ ধরনের ক্ষতির জন্য যাত্রীদের ‘জেএটিএ’ নিয়ম অনুসারে কেজি প্রতি ২০ ডলার হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিজনেস ক্লাস যাত্রীদের ২ হাজার এবং ইকোনমি যাত্রীদের ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে জানা গেছে, লাগেজ চুরির সঙ্গে জড়িত চক্রটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করে। তারা যাত্রী সেজে বেল্টের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে, এবং দীর্ঘক্ষণ ঘোরার পরেও কেউ না তুললে নির্দিষ্ট লাগেজটি সরিয়ে নেয়। এরা ক্যামেরার দৃষ্টির বাইরে গিয়ে পোশাক পাল্টে সাধু সেজে অবস্থান করে, যাতে শনাক্ত করা কঠিন হয়।
এদিকে, ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহযোগিতায় লাগেজ ফিরে পেলেও, অনেকেই পায়নি। এপিবিএনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিনই এমন অভিযোগ আসে এবং আন্তরিকভাবে তদন্ত করে যাত্রীদের সহায়তা করার চেষ্টা করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জানান, লাগেজ চুরি ঠেকাতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বডি ক্যামেরা, সিসিটিভি এবং নিরাপত্তা স্কোয়াডের তত্ত্বাবধানে লাগেজ হ্যান্ডলিং করা হয়। তবে বাস্তবতা বলছে, সব ব্যবস্থার মধ্যেও চুরি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সমস্যার সমাধান না হলে বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এবং দেশের পর্যটন ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনাও বাধাগ্রস্ত হবে।