কুয়ালালামপুর থেকে মো. আমিরুল ইসলামের মতো হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক আজ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শুধু একটি কারণেই—পাসপোর্ট সংকট। রাজশাহীর বাসিন্দা আমিরুল তিন বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান ভাগ্য ফেরাতে। এখন একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করে মাসে পান ২২০০ রিংগিত বেতন। কিন্তু সম্প্রতি তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে তিনি বিপাকে পড়েন। এক পর্যায়ে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে সতর্ক করে দেয়, পাসপোর্ট নবায়ন না করলে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
পাসপোর্ট নবায়নের জন্য তিনি দ্রুত যোগাযোগ করেন বাংলাদেশ হাইকমিশন ও পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু সেখানে কার্যত অচলাবস্থার সম্মুখীন হন। সার্ভার বন্ধ থাকার অজুহাতে আবেদন নেয়া হয় না। এই সুযোগে দালালরা হাজির হয়ে তাকে বলে, এক হাজার রিংগিত দিলে দ্রুত পাসপোর্ট করে দেওয়া যাবে। বাধ্য হয়ে তিনি ঘুষ দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন করেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী মাত্র ৫১ রিংগিত অতিরিক্ত দিলেই মিলতে পারে ই-পাসপোর্ট।
এই দুর্নীতির চক্র শুধু আমিরুলকে নয়, হাজার হাজার প্রবাসী শ্রমিককে জিম্মি করে রেখেছে। অভিযোগ রয়েছে, হাইকমিশনের কিছু কর্মকর্তা এবং অনুমোদিত আউটসোর্সিং কোম্পানির কর্মীরাও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। সার্ভার ‘ডাউন’ বা যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে দিনের পর দিন পাসপোর্ট কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। অথচ নির্দিষ্ট ঘুষের বিনিময়ে সেই সার্ভারই খুলে যায় দ্রুত। এর ফলে অনেকেই সময়মতো পাসপোর্ট না পেয়ে হয়ে পড়ছেন অবৈধ।
আরও পড়ুন
এ অবস্থায় অনেকে গ্রেপ্তারের আতঙ্কে রয়েছেন, আবার কেউ কেউ জরিমানার মুখে। পাসপোর্ট না থাকায় ভিসা নবায়ন করতে পারছেন না। কেউ কেউ আবেদন করার ছয়-সাত মাস পরেও হাতে পাচ্ছেন না নতুন পাসপোর্ট। হাইকমিশনে প্রতিদিন শত শত শ্রমিক ভিড় করছেন সেবা পাওয়ার আশায়, কিন্তু সাড়া মিলছে না। এমনকি অভিযোগ জানানোর পরও নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর ব্যবস্থা। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন প্রবাসীরা।
সরেজমিন তদন্তে উঠে এসেছে দালালচক্রের প্রভাবশালী অবস্থান ও হাইকমিশনের কিছু কর্মচারীর যোগসাজশ। এক অফিস সহায়কের অডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাকে প্রবাসীকে হুমকি দিতে শোনা যায়। তিনি দাবি করেন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এসব ঘটনায় পাসপোর্ট উইংয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নোটিসও জারি করেছে হাইকমিশন।
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ৩০ হাজারের বেশি প্রবাসী পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। অনেকেই এখনো অপেক্ষমাণ। এ অবস্থায় ই-পাসপোর্টের দ্রুত কার্যক্রম শুরু ও দালালমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হাইকমিশনকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমছে না, বরং প্রতিদিন বাড়ছে তাদের হতাশা ও ক্ষোভ।