দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি উঠলেও এবারই প্রথম নির্বাচন কমিশন (ইসি) সরাসরি উদ্যোগ নিয়েছে। প্রবাসীদের ভোট প্রদানে প্রক্সি, অনলাইন, পোস্টাল ও সশরীরে উপস্থিতির-এই চারটি পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাই করছে সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞদের মতামত সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
ইসি জানিয়েছে, সব পক্ষের মতামত পর্যালোচনা করে চলতি মাসেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। ভবিষ্যতের জাতীয় নির্বাচনে এই পদ্ধতিগুলোর কোনো একটি বা একাধিক প্রয়োগের সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে ভোট গ্রহণ পদ্ধতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মত দিয়েছেন প্রযুক্তি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতির প্রতি ইসির আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এতে প্রবাসী ভোটার অ্যাপের মাধ্যমে নিজেকে নিবন্ধন করে তার পক্ষে নির্দিষ্ট একজনকে ভোট দিতে অনুমতি দিতে পারবেন। তবে এই পদ্ধতি কার্যকর করতে সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। এমআইএসটি কর্তৃক উপস্থাপিত প্রস্তাবনায় এ পদ্ধতিকে তুলনামূলক সহজ ও সম্ভাবনাময় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন
তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, প্রক্সি ভোটিংয়ে স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। তারা আশঙ্কা করছেন, প্রক্সির মাধ্যমে আসল ভোটারের পছন্দ প্রতিফলিত না হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি এই পদ্ধতি ভোট কেনাবেচার ক্ষেত্রেও সুযোগ তৈরি করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এছাড়াও অনলাইন ও পোস্টাল ব্যালটের ব্যবহার নিয়েও আলোচনা চলছে। অনলাইন ভোটিংয়ের ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা, ভোট পুনঃগণনার অনুপস্থিতি এবং হ্যাকিংয়ের শঙ্কা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। পোস্টাল ব্যালটের ক্ষেত্রে সময়মতো ব্যালট পৌঁছানো এবং ফেরত পাঠানো অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। এসব কারণে সশরীরে ভোটের ব্যবস্থাও ইসির আলোচনায় রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতির পরিবর্তে একাধিক পদ্ধতির সমন্বিত ব্যবহারই হতে পারে বাস্তবসম্মত সমাধান। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ভোটের পদ্ধতি নির্বাচন করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ কিছু দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার অনুপস্থিতি সরাসরি ভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে।
বর্তমানে প্রায় এক কোটি ৩৪ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, যারা এতদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিলে নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। এখন সময়, প্রযুক্তি, আইন ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় সবার জন্য উপযোগী একটি পদ্ধতি চূড়ান্ত করার পথে এগোচ্ছে সংস্থাটি।