গত বছরের জুলাইয়ে দেশে চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পটভূমিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল প্রবাসীদের ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ কর্মসূচি। তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো সাময়িক বন্ধ রাখেন, যার ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের ধস নামে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি ঘটে এবং রেমিট্যান্সে একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি হতে থাকে।
ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে কারাবন্দি ৫৭ বাংলাদেশি প্রবাসীর মুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, যা প্রবাসীদের মধ্যে তার প্রতি আস্থাকে আরও জোরদার করে। সেই সঙ্গে প্রবাসীদের ও তাদের স্বজনদের জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওয়েটিং লাউঞ্জ চালু করাও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এসব উদ্যোগে প্রবাসীদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক উন্নয়ন হয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
তবে সম্প্রতি ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে ফের উদ্বেগ তৈরি হয় প্রবাসীদের মধ্যে। বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রেমিট্যান্স শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্য, ড. ইউনূস দেশের সংকটে সাহসী নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তিনি পদত্যাগ করলে তারা বৈধ পথে টাকা পাঠানো থেকে বিরত থাকতে পারেন।
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও দুবাইয়ের প্রবাসীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা ড. ইউনূসকে বর্তমান সংকটের একমাত্র কার্যকর নেতা হিসেবে দেখছেন। প্রবাসীদের মতে, তার নেতৃত্বেই ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন সম্ভব এবং দেশের অর্থনীতি সচল রাখা যাবে। তার পদত্যাগ প্রবাসীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করবে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের পতন ঘটতে পারে।
উল্লেখ্য, হাসিনা সরকারের পতনের পর আগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিটি মাসেই রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চে রেকর্ড ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ। অথচ গত বছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল মাত্র ১.৯৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, এখন আবার রেমিট্যান্স কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যমতের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি, নইলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তের প্রভাব সরাসরি প্রবাসীদের আস্থায় এবং দেশের অর্থনীতিতে পড়বে।