টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি, লাল মাটির পশ্চাৎপদ হাগুড়াকুড়ি গ্রামে ডা. এড্রিক বেকারের হাতে গড়ে ওঠা কাইলাকুড়ি স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র এখনও দরিদ্র মানুষের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা, নীরব ও নির্মল পরিবেশে প্রতিদিন শত শত রোগী এখানে সেবা নিতে ভিড় করেন। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির পরিবর্তে আন্তরিকতা ও মানবিকতা-ভিত্তিক চিকিৎসাই এই হাসপাতালের মূল শক্তি।
নিউজিল্যান্ডের নাগরিক ডা. এড্রিক বেকার ১৯৮৩ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। ৩৬ বছর অক্লান্ত সেবা দেওয়ার পর ২০১৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই তাকে সমাহিত করা হয়। স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন “গরিবের ডাক্তার” নামে। তার মৃত্যুর পর ২০১৮ সাল থেকে হাসপাতালের হাল ধরেছেন আমেরিকান চিকিৎসক দম্পতি জেসিন ও মেরিন্ডি, যারা এখনো তার আদর্শ ধারণ করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন
প্রতিদিন এখানে আউটডোরে প্রায় দেড় শতাধিক রোগী সেবা নেন। ইনডোরে ভর্তি থাকেন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী। টাঙ্গাইল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন বিশেষ করে ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার জন্য। নতুন রোগীদের কাছ থেকে ৩০ টাকা এবং পুরাতনদের কাছ থেকে ১৫ টাকা ফি নেওয়া হয়। ইনসুলিনসহ নানা ওষুধ দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ২ জন এমবিবিএস চিকিৎসক, ২ জন ইন্টার্ন ডাক্তার, ৬ জন নার্স, ৬ জন মিডওয়াইফ, ১২ জন গ্রাম্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ মোট ৭৯ জন স্টাফ। তারা সবাই আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
রোগীরা বলছেন, এখানকার চিকিৎসা, পরিষেবা ও মানবিকতা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। জামালপুর থেকে আসা এক রোগী জানান, স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করে সুফল না পাওয়ায় তিনি এখানে এসেছেন। অপর এক রোগী বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছেন এবং সবার ব্যবহার ও সেবার মানে তিনি সন্তুষ্ট।
হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক পিজন নংমিন জানান, প্রতিনিয়ত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পেলে সেবার পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। বর্তমানে হাসপাতালে নিবন্ধিত ১,৮০০ ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে ১,০০০ জনকেই ইনসুলিন সরবরাহ করা হচ্ছে।