বাংলাদেশের নবনিযুক্ত ডেপুটি হাইকমিশনার শাবাব বিন আহমেদ কলকাতায় দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ঐতিহ্যগত কোরবানি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ায় কূটনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার বাংলাদেশ মিশনে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ঈদুল আজহার কোরবানি দেওয়ার রেওয়াজ চলছিল। প্রতিবছর কয়েকটি গরু ও ছাগল কোরবানি দিয়ে স্থানীয় মুসলিমদের মাঝে বিতরণ করা হতো। এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরেও আলোড়ন দেখা দিয়েছে।
ডেপুটি হাইকমিশনার শাবাব বিন আহমেদ কোরবানি বন্ধের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ভারতে গরু পূজার প্রথা রয়েছে, এবং কলকাতা মিশনে কর্মরত নিরাপত্তাকর্মীদের অধিকাংশই এই ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসরণ করেন। গরু কোরবানি তাদের অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে, যা স্বাগতিক দেশের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ে বলা হয়েছে, যেখানে-সেখানে পশু জবাই করা যাবে না—এ বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।
তবে এ পদক্ষেপ নিয়ে কূটনীতিকদের একটি অংশ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, দায়িত্ব গ্রহণের আগেই এমন স্পর্শকাতর ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয়। একজন সিনিয়র কূটনীতিক বলেন, কোরবানি বন্ধের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র হেডকোয়ার্টার বা হাইকমিশনার নিতে পারেন; ডেপুটি হাইকমিশনারের এমন পূর্ব হস্তক্ষেপ সন্দেহজনক। কেউ কেউ শাবাব বিন আহমেদের অতীত দিল্লি পোস্টিংকে উল্লেখ করে ধারণা করছেন, তিনি বিজেপির আদর্শে প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন।
আরও পড়ুন
কলকাতা মিশনের কর্মকর্তারা জানান, নতুন মিশনপ্রধানকে কোরবানির পর দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তিনি তাতে রাজি হননি এবং ২ জুন দায়িত্ব গ্রহণের আগেই কোরবানির প্রস্তুতি বন্ধ করতে বলেন। এ সিদ্ধান্তে মিশনের ভেতরে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় মুসলিম অধিবাসীদের মধ্যে কোরবানির গুরুত্ব অপরিসীম, এবং পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন সামনে থাকায় এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কলকাতার হিন্দু সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরাও কোরবানি বন্ধের বিরোধিতা করছেন, যা এই সিদ্ধান্তের প্রভাবের গভীরতাকে ইঙ্গিত করে।
এদিকে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে শাবাব বিন আহমেদের নিয়োগকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরেছে। তারা আশা প্রকাশ করেছে, সংখ্যালঘু নিরাপত্তা, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তবে কোরবানি ইস্যুতে তার সিদ্ধান্ত এই ইতিবাচক প্রত্যাশাকে আপাতত বিতর্কে ঘিরে ফেলেছে।