দেশের জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদ-এর কার্যক্রমের আড়ালে এক বিশাল আর্থিক কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অস্তিত্বহীন ও ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ছদ্মবেশী প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের নামে গ্রাহকদের শত শত কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা। এমনকি, এই অপকর্মে সরকারি কর্মকর্তাও জড়িত ছিলেন, যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপ-প্রেস সচিবের নামও উঠে এসেছে। অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এবং কেউ কেউ নগদকে নতুন করে সাজানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, নগদ তার কার্যক্রমের শুরুতে ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে আর্থিক জালিয়াতি এবং বিপুল পরিমাণ ই-মানি তৈরি করে। এর ফলে নগদের প্রায় ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাবের গরমিল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত প্রশাসক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির পরিদর্শনে এসব অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, নগদের শেয়ার লেনদেনেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ফিনটেক হোল্ডিংস লিমিটেড নামক একটি অস্তিত্বহীন সফটওয়্যার কোম্পানির মাধ্যমে এই অনিয়মের শুরু, যেখানে নগদ ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। বনানীর যে ঠিকানা এই কোম্পানির রেজিস্ট্রেশনে দেওয়া হয়েছে, সেখানে বাস্তবে কোনো ফিনটেক হোল্ডিংস-এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ, এই একই ভবনে নগদের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।
নগদের শেয়ার মালিকানার ক্ষেত্রেও ব্যাপক অস্বচ্ছতা দেখা গেছে। ব্লু ওয়াটার হোল্ডিংস লিমিটেড নামক একটি কোম্পানির ৬ শতাংশ শেয়ার থাকলেও, তাদের রেজিস্টার্ড ঠিকানাটিও ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাকের নাম থাকলেও, কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। একইভাবে, তাসিয়া হোল্ডিংস লিমিটেড নামক আরেকটি শেয়ারহোল্ডার কোম্পানির কার্যক্রমও সন্দেহজনক। এই কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ও নগদের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানায় অবস্থিত, যেখানে বাস্তবে নামমাত্র কার্যক্রম দেখা গেছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসক দল নগদের আর্থিক অনিয়মের ব্যাপক তদন্ত করছে। ক্যান্ডেলস্টোন ইনভেস্টমেন্টস পার্টনার লিমিটেড নামক একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন এবং পরবর্তীতে সেই শেয়ার দ্রুত সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরের ঘটনা তদন্তে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসাইন খান জানান, ৫ই আগস্টের পর নগদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের আমানত ঝুঁকিতে পড়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে এবং খুব শীঘ্রই অডিট রিপোর্ট পাওয়া যাবে, যেখানে অনিয়মের প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।