সাবেক আওয়ামী সরকারের আমলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন উর রশীদের ‘ভাতের হোটেল’ বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, সেলিব্রিটি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার বৈঠকের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তবে সরকারের পতনের পর থেকেই হারুন পলাতক রয়েছেন। পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে হারুনের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মামলাগুলোর তদন্তকালে হারুন ও তার পরিবারের প্রায় হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যা তাদের সেই ‘ভাতের হোটেলে’র আড়ালে থাকা ‘গুপ্তধন’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কেবল রাজধানীর উত্তরাতেই হারুনের নামে-বেনামে অন্তত ১৮টি জমি ও ভবন রয়েছে। উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর ‘হা-মীম’ নামের একটি বাড়ি, যার বর্তমান মালিক ব্যবসায়ী গোলাম হাসনাইন হিরন, আগে হারুনের অধীনে ছিল এবং প্রায় ৪০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। হারুনের এই বিপুল সম্পদ তৈরিতে পর্দার আড়ালে প্রধান ভূমিকা পালন করতেন ব্যবসায়ী হিরন এবং হারুনের কথিত মামা জাহাঙ্গীর, যিনি উত্তরার সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন।
অন্যান্য সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠার দুটি প্লট, ১০ নম্বর সেক্টরে ৫ কাঠার একটি প্লট, ১২ নম্বর রোডে একটি ভবনের পঞ্চম তলায় মামা জাহাঙ্গীরের অফিস এবং সোনারগাঁও জনপথে একটি ছয়তলা বাড়ি। দুদক জানতে পেরেছে, তাদের অনুসন্ধানকালে একটি চক্র হারুনের কিছু সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছিল। তাই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালত ইতোমধ্যে হারুনের উত্তরাস্থ একটি ফ্ল্যাট ও ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে, তার পাঁচটি ভবন, দুটি ফ্ল্যাট ও ১০০ বিঘা জমি এবং বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে থাকা এক কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকাও জব্দ করা হয়েছে। তার স্ত্রী ও ভাইয়ের সম্পদও একই প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডে একটি আটতলা বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে হারুনের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়াও গাজীপুরের সবুজপাতা রিসোর্ট, নিকুঞ্জে রিক্রুটিং এজেন্সি ও সাভারের নন্দন পার্কেও তার শেয়ার রয়েছে। বনানী কবরস্থানের পাশে ২০ কাঠার একটি প্লট দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে, যা ৭০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। টঙ্গী ও আশুলিয়ায়ও তার অবৈধভাবে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা ও জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। টেকনাফ, খাগড়াছড়ি, গাজীপুর ও সাভারেও হারুনের আরও সম্পদের সন্ধানে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে দুদক।