নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নে সরকার অগ্রসর হলে পাঁচ মিনিটও সময় পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটিউশনে জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে চরমোনাই পির বলেন, সরকার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে নারী নীতিকে বাহবা দিচ্ছে। তবে তাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, তারা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। তারা জনগণের ভোটের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করছেন না।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলন সর্বদা সরকারের সহযোগিতা করেছে এবং এখনও সেই অবস্থানে রয়েছে। তবে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয় যাতে তাদের রাস্তায় নামতে এবং ফ্যাসিবাদী ও সুযোগসন্ধানী শত্রুদের মুখোমুখি হতে হয়। এরপরও যদি সরকার এই পথে অগ্রসর হয়, তবে স্পষ্ট বার্তা—কেউ বলছে না যে পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে, সেই পাঁচ মিনিটও তারা পাবে না।
নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে উল্লেখ করে চরমোনাই পির বলেন, তাদের নেতাকর্মীরা ৫ আগস্ট ভাত রান্না করেও খেতে পারেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই, বিভিন্ন দিকে যারা সতর্ক দৃষ্টি রাখছে তারাও নিষ্ক্রিয় নয়।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সরকার সম্ভবত এই সংস্কার বা নারী কমিশনের মাধ্যমে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে। এরপর যখন আলেম-ওলামারা রাস্তায় নামবেন, তখন ঘাপটি মেরে থাকা দেশবিরোধী শক্তি সেই সুযোগে রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে—এমন একটি নীলনকশা তৈরি করা হতে পারে।
সেমিনারে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করে চরমোনাই পির প্রশ্ন তোলেন, এই নারী কমিশন তার কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। অতীতে নাস্তিকদের চক্রান্ত আল্লাহর রহমতে কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এমন হীন চিন্তা বাস্তবায়ন করতে চাইছে—কিন্তু তারা জানে এর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও তারা কেন এই পথ বেছে নিল, তার কারণ বোধগম্য নয়।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।
সেমিনারে ইসলামী আন্দোলনের সহযোগী সংগঠন জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ চারটি দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো—নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, কমিশনকে সরকারিভাবে বাতিল করতে হবে, নতুন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দ্বীনদার, শিক্ষিত ও দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং পরিবার ও নারী বিষয়ক যেকোনো প্রস্তাবের ভিত্তি কুরআন-সুন্নাহ, সংবিধান ও সামাজিক বাস্তবতা হতে হবে।