বিদেশে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা পাঁচ নারী কর্মী এখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। রাজধানীর বুকে তারা গড়ে তুলেছেন একটি খাবারের ব্যবসা, যার নাম দিয়েছেন ‘ধ্রুবতারা ক্যাটারিং সার্ভিস’। এই উদ্যোগই এখন তাদের জীবন ধারণের একমাত্র অবলম্বন।
রাজধানীর দক্ষিণখানে ‘ধ্রুবতারা’র ভাড়া করা বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন সুমি, হেলেনা, সোহাগি, শাহিনুর ও আঁখি। কেউ রান্নার কাজে ব্যস্ত, কেউবা তৈরি করা ডাল ও মুরগির তরকারি প্যাকেট করছেন। গরম ভাত, ডাল ও মুরগির তরকারি মিলিয়ে ৭০টি বাক্স প্রস্তুত করে বড় কয়েকটি ব্যাগে ভরা হচ্ছে। দুপুরে খাবার বিক্রির জন্য বনানী, খিলক্ষেত, উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকার বিভিন্ন অফিস ও মার্কেটের উদ্দেশ্যে ব্যাটারিচালিত রিক্সায় রওনা হন তারা। দিনের শুরুতে খাবার বিক্রির অনিশ্চয়তা তাদের চোখেমুখে স্পষ্ট, দিনের শেষে সব বিক্রি করে বাটি ফেরত নিয়ে আসতে প্রায় বিকেল গড়িয়ে যায়। এরপর আবার রাতের খাবারের জোগাড় শুরু করতে হয়।
এই পাঁচ নারীর ভাগ্য যেন একই সূত্রে গাঁথা। ভিন্ন জেলার বাসিন্দা হলেও প্রবাসের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাদের এক করেছে। একসময় একে অপরের অপরিচিত থাকলেও, বিদেশে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে তারা কাছাকাছি আসেন। সরকারের সহায়তায় দেশে ফিরলেও অনেকের পরিবারে ঠাঁই মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে একসঙ্গে জীবন যাপন করছেন তারা। সৌদি আরবে উন্নত জীবনের আশায় গিয়ে এই নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে ফিরে এসেছেন দেশে। তবে তারা এখন বলছেন, সেই কষ্টের তুলনায় এই জীবন অনেক ভালো।
আরও পড়ুন
বিদেশ ফেরত এই নারী শ্রমিকদের পুনর্বাসনে সহায়তা করেছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। তাদের আর্থিক সহায়তা, বাড়ি ভাড়া ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে সংস্থাটি। গত বছর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় দেশে ফেরার পর এই পাঁচ নারী মিলে ‘ধ্রুবতারা ক্যাটারিং সার্ভিস’ শুরু করেন। এই ব্যবসা থেকে যা আয় হয়, তা তারা সমানভাবে ভাগ করে নেন। এমনকি প্রতিষ্ঠানের লাভের দুই শতাংশ তাদের মতো নির্যাতিত হয়ে ফেরা অন্য নারী শ্রমিকদের জন্য জমা করেন। এদের মধ্যে একজন নারী তার এক বছর বয়সী সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই খাবার বিক্রি করেন। সৌদিতে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরার পর স্বামীর ঘরে জায়গা না পেয়ে এই প্রতিষ্ঠানেই তিনি আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন। ‘ধ্রুবতারা’র ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকা ডালিয়া আক্তারও সৌদি আরবে ১৪ মাস নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। দীর্ঘ চিকিৎসার পর দেশে ফিরে তিনিও এখন এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন। যদিও ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে আয় খুব বেশি নয়, তবে তারা আশাবাদী। খাবারের অর্ডার বাড়লে তাদের কষ্ট কিছুটা কম হবে। তাই তারা একটি হটলাইন চালুরও পরিকল্পনা করছেন।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, এই নারীদের এককালীন আর্থিক সহায়তা সহ বিভিন্ন সাহায্য দেওয়া হয়েছে এবং ব্র্যাকের স্বেচ্ছাসেবকরা এখনও তাদের পাশে আছেন। তবে, নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরা নারীদের তুলনায় এই উদ্যোগ নিতান্তই সামান্য।