সেনাপ্রধানের কঠোর হুঁশিয়ারি

সেনাপ্রধানের কঠোর হুঁশিয়ারি

জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে ২৫শে ফেব্রুয়ারি রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক মনোজ্ঞ ফটো এক্সিবিশনে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাঁর সুচিন্তিত বক্তব্য প্রদান করেছেন। সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যে দেশ ও জাতির শান্তি নিশ্চিতকরণ এবং পরবর্তীতে সেনানিবাসে প্রত্যাবর্তন—এই দুটি বিষয়কে তাঁর ‘একমাত্র লক্ষ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

সেনাপ্রধান আরও স্পষ্ট করে বলেন, দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা কেবল সেনাবাহিনীর একার দায়িত্ব নয়। এই গুরুদায়িত্ব আনসার, পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-সহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর বর্তায়।

তবে, তিনি উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে অনেক পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকার কারণে পুলিশের কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছে, এবং অন্যান্য বাহিনীও সম্ভবত আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান তাঁর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে, দেশ একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা আশা করছি যে, ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।” নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর এই মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে সবাইকে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে কেউ যেন একথা বলতে না পারে যে, তাকে সতর্ক করা হয়নি।” এই সতর্কবার্তা সম্ভবত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং যেকোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার গুরুত্বের দিকে ইঙ্গিত করে।

দেশের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ড. ইউনূস দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি ড. ইউনূসের এই প্রচেষ্টার প্রতি সম্মান জানান এবং তাঁর অবদানের স্বীকৃতি দেন।

সেনাপ্রধান দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার উপর জোর দিয়ে দেশবাসীর প্রতি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হানাহানি করার কোনো প্রয়োজন নেই।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “পরে যেন কেউ না বলেন যে, আগেই সতর্ক করা হয়নি।” সেনাপ্রধানের এই আহ্বান জাতীয় ঐক্য এবং শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সেনাবাহিনীর প্রতি বিদ্বেষ পরিহার করে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “আমরা ভালো উপদেশ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। আমাদের সাহায্য করুন, আক্রমণ নয়।” তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান যে, সেনাবাহিনী গঠনমূলক সমালোচনা এবং সহযোগিতা গ্রহণে প্রস্তুত, তবে বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণ কাম্য নয়।

সবশেষে, সেনাপ্রধান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে অনেক অপরাধী সুযোগ নিচ্ছে, যা দেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।” তিনি দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর প্রকাশ করেন এবং এই পরিস্থিতিতে সকলের সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের এই বক্তব্য জাতীয় শহীদ সেনা দিবসের অনুষ্ঠানে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করে এনেছে, যা দেশের শান্তি, নিরাপত্তা এবং নির্বাচন নিয়ে নতুন করে ভাবনার খোরাক যোগাবে।

 

আরও দেখুনঃ

whatsappচ্যানেল ফলো করুন

প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Gif final ezgif.com optimize