ভারতীয় বিমানবাহিনীর দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন যুদ্ধবিমান মিগ-২১ অবশেষে অবসরে যাচ্ছে। এক সময় আকাশ প্রতিরক্ষার প্রধান ভরসা হিসেবে বিবেচিত হলেও, ধীরে ধীরে এটি ‘উড়ন্ত কফিন’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ঘন ঘন দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনায় এ বিমান নিয়ে বারবার উদ্বেগ দেখা দেওয়ায়, সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বহরে রাশিয়ায় নির্মিত মোট ৩৬টি মিগ-২১ বিমান সক্রিয় রয়েছে। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এগুলোর কার্যকরী মিশন শেষ হবে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস এমকে-১এ বিমানগুলো এই পুরনো যুদ্ধবিমানের স্থান দখল করবে।
জানা গেছে, চণ্ডীগড়ের একটি বিমানঘাঁটিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মিগ-২১-এর বিদায় জানানো হবে। ১৯৬৩ সাল থেকে আকাশ প্রতিরক্ষায় যুক্ত থাকা এই বিমান ভারতের সামরিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে।
আরও পড়ুন
দীর্ঘ ছয় দশক ধরে ভারতীয় আকাশে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করলেও, সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পারায় মিগ-২১ বারবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের মে মাসে রাজস্থানে এক দুর্ঘটনায় তিনজন গ্রামবাসী প্রাণ হারান, যা বিমানটির প্রযুক্তিগত দুর্বলতা ফের স্পষ্ট করে দেয়।
মিগ-২১ এর ইতিহাসে রয়েছে একাধিক সামরিক সাফল্যও। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ, এবং ২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এই যুদ্ধবিমান। বিশেষভাবে স্মরণীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের পাকিস্তানি বিমান প্রতিহত করার ঘটনাটি, যেখানে তিনি মিগ-২১ চালাচ্ছিলেন।
২০২২ সালে ভারত সরকার ঘোষণা দেয়, তিন বছরের মধ্যে মিগ-২১-এর বাকি স্কোয়াড্রনগুলো ধাপে ধাপে সরিয়ে নেওয়া হবে। ২০২৫ সালের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি, মিগ-২৯ বিমানগুলোও ২০২৭ সালের মধ্যে বাতিল করার পরিকল্পনা রয়েছে। একসময়কার এই ‘উড়ন্ত কিংবদন্তি’র স্থানে আধুনিক দেশীয় প্রযুক্তিনির্ভর বিমান যুক্ত হবে ভারতের আকাশরক্ষায়।