দক্ষিণ ভারতের কেরালা উপকূলে অবস্থিত লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত বিত্রা দ্বীপে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। সম্প্রতি (১১ জুলাই) কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলের রাজস্ব বিভাগ এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, দ্বীপটি প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত কাজে ব্যবহারের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ করা হবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিত্রা দ্বীপে বর্তমানে ১০৫টি পরিবার বসবাস করছে এবং এটি একটি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে নয়াদিল্লি দ্বীপটির উপর জাতীয় নিরাপত্তা ও সামুদ্রিক কৌশলের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
লাক্ষাদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ রুটের কাছাকাছি হওয়ায় এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেই সহজে সামুদ্রিক ট্র্যাফিক পর্যবেক্ষণ করা যায়, এবং নৌ-অভিযানের জন্যও এটি কার্যকর একটি কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
আরও পড়ুন
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মালদ্বীপের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক এবং সামুদ্রিক অঞ্চলে চীনের নজরদারির প্রেক্ষাপটে ভারত নিজেদের দক্ষিণ উপকূলীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে চাইছে। পাকিস্তানের করাচি থেকে বিত্রা দ্বীপের দূরত্ব আকাশপথে মাত্র ১,০০০ কিলোমিটার—যা দ্বীপটির কৌশলগত গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক ও জনমতভিত্তিক বিরোধিতা শুরু হয়েছে। লাক্ষাদ্বীপের কংগ্রেস সাংসদ হামদুল্লাহ সাইদ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ বিত্রার পরিবেশ ধ্বংস করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, স্থানীয়দের মতামত বা পরামর্শ ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের কথাও বলা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ভারত-মালদ্বীপ কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাক্ষাদ্বীপ সফর করেন এবং দ্বীপটিকে বিকল্প পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরেন। সেই সময় থেকেই লাক্ষাদ্বীপের কৌশলগত গুরুত্ব নতুন করে আলোচনায় আসে। এরই ধারাবাহিকতায়, জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় সমুদ্রসীমায় নজরদারি জোরদার করার অংশ হিসেবে বিত্রা দ্বীপে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা এখন দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে।