ভারতের কর্নাটক রাজ্যের গোকর্ণা জঙ্গলের রামতীর্থ পাহাড় এলাকায় একটি গুহা থেকে এক রুশ নারী ও তার দুই কন্যা শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া ওই নারী, নিনা কুটিনা (৪০), গত ৯ জুলাই নিয়মিত পর্যটন টহলের সময় পুলিশ নজরে আসেন। দীর্ঘদিন ধরে গুহাতেই দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে বসবাস করছিলেন তিনি।
গুহার প্রবেশপথে কাপড় দিয়ে তৈরি করা ছিল অস্থায়ী পর্দা, আর আশপাশে শুকানো কাপড় দেখে সন্দেহ জাগে পুলিশের। একজন স্বর্ণকেশী শিশুকে গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে পুলিশ ভেতরে ঢুকে আরও এক শিশু ও তাদের মাকে খুঁজে পায়। গুহার ভেতরে পাওয়া যায় অল্প কিছু জিনিস—পুরোনো প্লাস্টিকের চট, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, কিছু শুকনো খাবার ও কাপড়চোপড়। স্থানীয় পুলিশের মতে, বর্ষার সময়ে ওই পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস ও বন্যপ্রাণীর ঝুঁকি থাকায় তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
নিনা কুটিনা জানিয়েছেন, তারা স্বেচ্ছায় প্রকৃতির মধ্যে এভাবে বসবাস করছিলেন এবং এতে নিজেদের খুবই নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তার ভাষায়, “মানুষ নয়, প্রকৃতিই আমাদের সুস্থতা দেয়।” তিনি আরও জানান, তার চার সন্তানের মধ্যে একজন মারা গেছে, একজন রাশিয়ায় থাকে, আর বাকি দুজন তার সঙ্গে ছিল। কুটিনার দাবি অনুযায়ী, তার একটি শিশু এই গুহাতেই জন্ম নিয়েছে।
তবে তাদের ভারতে বসবাস ছিল অবৈধ। পুলিশ জানায়, কুটিনা ২০১৬ সালে একটি ব্যবসায়িক ভিসায় ভারতে আসেন, যার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালে। এরপর তিনি নেপাল গেলেও পরে ভারতে ফেরত আসেন এবং দীর্ঘদিন অবৈধভাবে বসবাস করেন। বর্তমানে তাকে বেঙ্গালুরুর একটি বিদেশি বন্দি কেন্দ্রে রাখা হয়েছে এবং রাশিয়ায় ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ চলছে।
এদিকে মেয়েদের বাবা একজন ইসরায়েলি নাগরিক ও ব্যবসায়ী, যিনি ভারতে অবস্থান করছেন। তার দাবি, কুটিনা তার অনুমতি ছাড়া মেয়েদের নিয়ে গোয়া থেকে চলে যান। তিনি মেয়েদের যৌথ হেফাজতের দাবি তুলেছেন এবং বলেছেন, মেয়েদের রাশিয়ায় পাঠানোর ক্ষেত্রে তিনি আইনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন। এই নিয়ে প্রশাসনিক ও আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে।
প্রথমে অনেকে ধারণা করেছিলেন, কুটিনা আধ্যাত্মিক সাধনায় গুহায় ছিলেন, কারণ গুহা থেকে হিন্দু দেবতা ‘পান্ডুরঙ্গা’র একটি মূর্তিও উদ্ধার হয়। তবে তিনি এ ধারণা নাকচ করে বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করা। বর্তমানে রুশ কনস্যুলেট, পুলিশ ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষ পুরো ঘটনাটি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা করছে।