১৯৭০ ও ৮০’র দশকে, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারি আর যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের যৌথ বাধা সত্ত্বেও পাকিস্তানে শুরু হয়েছিল এক সাহসী পারমাণবিক কর্মসূচি। এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন ড. আবদুল কাদির খান। নানা ধরনের হুমকি ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সফলভাবে পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে সক্ষম হয়—যা দেশটির জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জনে পরিণত হয়।
তৎকালীন বিশ্বশক্তিগুলো বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইসরায়েল পাকিস্তানের এ কর্মসূচি ব্যর্থ করতে একাধিক পরিকল্পনা নেয়। এমনকি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ একাধিকবার কাদির খান ও তাঁর সহযোগীদের হত্যার চেষ্টা চালায়। ধারণা করা হয়, ইউরোপের কয়েকজন ব্যবসায়ী যাঁরা খানের সঙ্গে কাজ করতেন, তাঁরা এই গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টার শিকার হন। ইসরায়েল এবং ভারত এক পর্যায়ে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় যৌথ হামলার পরিকল্পনাও করে, যদিও শেষপর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ড. কাদির খান শুধু পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াসহ একাধিক দেশকে গোপনে পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহ করতেন। এই কর্মকাণ্ডের ফলে তাঁকে ‘প্যারালাল নিউক্লিয়ার নেটওয়ার্ক’-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে এমনকি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ যন্ত্রের নকশা চুরি করে পাকিস্তানে সরবরাহ করার অভিযোগও রয়েছে।
আরও পড়ুন
২০০৩ সালে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির স্বীকারোক্তির মাধ্যমে খানের গোপন নেটওয়ার্কের বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে ফাঁস হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র চাপে পড়ে তিনি ২০০৪ সালে টেলিভিশনে এসে পারমাণবিক বিস্তার স্বীকার করেন। যদিও দাবি করেন, এটি ছিল তাঁর একক সিদ্ধান্ত, সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এরপর তাঁকে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী করে রাখা হয়।
তবে পাকিস্তানের জনগণের কাছে ড. কাদির খান ছিলেন এক জাতীয় বীর। পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমে দেশকে সুরক্ষিত করার কারণে তাঁকে অভূতপূর্ব সম্মান দেওয়া হয়। শহর, সড়ক, এমনকি ক্রীড়া দলগুলোর নামকরণও হয় তাঁর নামে। মৃত্যুর পরও তাঁর অবদান দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।