ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ সুলাওয়েসির পার্বত্য অঞ্চল টোরাজার মানুষের কাছে মৃত্যু কোনো শেষ নয়, বরং সম্পর্কের এক নতুন রূপ। এই জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, প্রিয়জন মারা গেলেও তাদের প্রতি ভালোবাসা ও যত্ন থেমে থাকে না। তারা মৃতদের সঙ্গে আচরণ করেন জীবিতদের মতোই, এবং মৃত্যুকে শোক নয়—উৎসবের মাধ্যমে উদ্যাপন করেন।
টোরাজায় ধনী পরিবারের কারও মৃত্যু হলে তা হয়ে ওঠে এক বিশাল সামাজিক অনুষ্ঠান। ঐতিহ্য অনুসারে, মৃত ব্যক্তির কাঠের একটি প্রতিরূপ মূর্তি, যাকে তারা ‘তাউ-তাউ’ বলেন, কবরের সামনে স্থাপন করা হয়। কেউ কেউ অনেকগুলো মহিষ বলি দিয়ে মৃতের সম্মানে স্থাপন করেন বিশাল পাথরের স্তম্ভ, যা তাদের মর্যাদা প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন
প্রতি বছর ফসল কাটার পরপরই ‘মানেনে’ নামে এক বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় মৃতদের কবর থেকে তুলে আনা হয়। তাদের দেহ পরিষ্কার করা হয়, পরানো হয় নতুন পোশাক, সাজানো হয় গয়না দিয়ে—এমনকি পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন, যেমনটা জন্মদিন বা বিয়েতে করা হয়। এই অনন্য সংস্কৃতির মূল দর্শন হলো—ভালোবাসা কখনও মরে না।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে চলে মহিষ বলি, লোকগান, স্থানীয় মদ্যপান, এমনকি ষাঁড় ও মোরগের যুদ্ধ। পুরো গ্রামজুড়ে চলে আনন্দঘন পরিবেশ। ছোট শিশুরাও দাদু-দাদির মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবি তোলে, যেন মৃত্যু নয়, এক পারিবারিক মিলনমেলা চলছে।
মৃতদের কফিন টেনে বের করে নতুন করে সাজানো ও আবার কফিনে ভরে সংরক্ষণ করা টোরাজায় স্বাভাবিক ব্যাপার। ঐতিহ্যবাহী নিয়মে কেউ কেউ আজও পাহাড়ের গায়ে বা গুহার ভেতর পাথরের কবর তৈরি করেন। টোরাজাদের দৃষ্টিতে মৃত্যু জীবনের শেষ নয়, বরং এক নতুন পর্যায়ের সূচনা। তারা বলেন, “আমরা যাদের ভালোবাসি, তারা আমাদের মাঝেই আছেন—শুধু ভিন্ন ঘরে বাস করেন।”