ভারতের গুজরাটে ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৯৪ জন। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১৭১ ফ্লাইটটি আহমেদাবাদ থেকে ব্রিটেনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘানিনগরের বিজে মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। দুর্ঘটনায় বিমানটির ২৪২ আরোহীর মধ্যে প্রায় সবাই নিহত হন এবং কলেজের অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারান। দুর্ঘটনায় সৌভাগ্যক্রমে একমাত্র জীবিত ব্যক্তি বিমানের জরুরি বহির্গমন দরজার পাশের ১১ নম্বর আসনে বসা ছিলেন।
দুর্ঘটনার পরপরই বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। উদ্ধারকারীরা প্রায় ২০০টিরও বেশি লাশ উদ্ধার করে, যার অনেকগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। মৃতদের শনাক্ত করতে গুজরাট প্রশাসন ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করছে। আহতদের মধ্যে অনেককে আইসিইউতে রাখা হয়েছে, বেশ কয়েকজন এখনও নিখোঁজ।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাজ্য পুলিশ। এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্র প্যাটেলসহ দেশ-বিদেশের নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রয়োজনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে কাজ শুরু করেছে ভারতের সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ (ডিজিসিএ)। জানা গেছে, পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়ালের ৮২০০ ঘণ্টা উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা ছিল। উড্ডয়নের মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই তিনি ‘মে ডে’ সংকেত পাঠান, এরপরই বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ‘মে ডে’ সংকেত একটি আন্তর্জাতিক জরুরি কল, যা সাধারণত বড় কোনো বিপদের সময় পাঠানো হয়।
বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের, যা এতদিন কোনো বড় ধরনের বিধ্বস্তের মুখে পড়েনি। এই দুর্ঘটনা বোয়িং সংস্থার জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষত ৭৩৭ মডেলের একের পর এক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। বোয়িং এবং আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা থেকে মার্কিন ও ব্রিটিশ তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলে এসে তদন্তে সহায়তা করবেন বলে জানা গেছে।
টাটা গ্রুপ, যাদের মালিকানায় বর্তমানে এয়ার ইন্ডিয়া রয়েছে, দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ১ কোটি রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব এবং বিধ্বস্ত হোস্টেল পুনর্নির্মাণে সহযোগিতার অঙ্গীকারও করেছে তারা।
দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পর সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আবার চালু হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে এবং আত্মীয়স্বজনদের সহায়তায় বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।