ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে পুশ-ব্যাক করার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ভারতের দিক থেকে এটি পুশ-ব্যাক হলেও, বাংলাদেশের চোখে এটি পুশ-ইন।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুশ-ব্যাক বা পুশ-ইন হলো ধরা পড়া ব্যক্তিদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে অন্য দেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া। এই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি ভারতে নেই, তবে এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
ভারতের মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এভাবে পুশ-ব্যাক করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক বা পাচারের শিকার হওয়া নারীদের অনেক ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়, যা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত।
আরও পড়ুন
গত তিন সপ্তাহে গুজরাট ও রাজস্থান পুলিশ অবৈধভাবে বসবাস করা এক হাজারের বেশি মানুষকে চিহ্নিত করেছে এবং তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে। ওড়িশাসহ অন্য কয়েকটি রাজ্যেও এমন ‘অনুপ্রবেশকারী’ ধরা পড়ছে।
আইন অনুযায়ী, পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নিয়ম, যা বিদেশীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের প্রধান কিরীটী রায় জানান, পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া ভারতে এলে গ্রেফতার করে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হয় এবং সাজা হলে আদালতের মাধ্যমে ফেরত পাঠাতে হয়। কিন্তু এখন আইন ও সংবিধান মানা হচ্ছে না।
সাজা শেষ হওয়ার পরে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অনেক বিদেশী, বিশেষ করে বাংলাদেশিরা, জেল খেটে সাজা শেষ হওয়ার পরও দেশে ফিরতে পারেন না। পরিচয় নিশ্চিত করার জটিল কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তাদের ফেরত পাঠানো হয়।
সামাজিক কর্মীরা অভিযোগ করছেন, গুজরাট ও রাজস্থানে যাদের ‘বাংলাদেশি’ বলে ধরা হয়েছে, তাদের প্রায় কাউকেই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আটক করা হয়নি।
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক জানান, হেল্পলাইন নম্বরে আসা ফোনকলের মধ্যে খুব কম ব্যক্তিকেই আদালতে তোলা হয়েছে।
গুজরাট পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আটকের পর সরাসরি জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে পাঠানো হয় এবং বাংলাদেশি প্রমাণিত হলে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখানে আদালতে হাজির করার কথা উল্লেখ নেই।
বিএসএফ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে না চাইলেও, কিছু সূত্র নিশ্চিত করেছে যে চিহ্নিত অবৈধ বাংলাদেশিদের ছোট-বড় দলে ভাগ করে পুশ-ব্যাক করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানায়, গ্রেফতার করে মামলা চালালে এবং সাজা হলে জেলে রাখতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ এবং জেলগুলোতে জায়গা সংকট তৈরি করবে।