পাকিস্তান সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার (৮ মে) ভারতের পাঠানো ৩০টি ইসরায়েলি নির্মিত কামিকাজে ড্রোন আটক ও ধ্বংস করেছে বলে দাবি করেছে। দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শুক্রবার (৯ মে) এই তথ্য জানিয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, এই ঘটনায় দুজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং একটি সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ড্রোন হামলায় চারজন পাকিস্তানি সেনা আহত হয়েছেন, যাদের অবস্থা গুরুতর। ভারত বেসামরিক ও সামরিক উভয় স্থাপনাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালায়। ড্রোনগুলো রাওয়ালপিন্ডি, গুজরাত, অ্যাটক, গুজরানওয়ালা, লাহোর, শেখুপুরা, নানকানা, ঘোটকি এবং করাচির মালির জেলাসহ বিভিন্ন শহরের আকাশে শনাক্ত করা হয়।
নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানি সেনারা পান্ডো সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপ্রত্যাশিত গোলাবর্ষণের কার্যকর জবাব দিয়েছে এবং নাঙ্গা টাক-এ ভারতীয় ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ধ্বংসসহ অন্যান্য স্থানে গোলাবর্ষণ করে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। আইএসপিআর-এর মতে, এই ব্যর্থতার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত ড্রোন হামলা চালায়। পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ড্রোনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালালে বিভিন্ন এলাকায় উচ্চস্বরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আইএসপিআরের একজন কর্মকর্তা জানান, এই প্রথমবার দেশে ইসরায়েলি মানববিহীন আকাশযান (ইউএভি) হেরন এমকে-২ ধ্বংস করা হয়েছে, যা ৩৫,০০০ ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এবং ভারতে এটি হ্যারোপ ড্রোন নামে পরিচিত। ড্রোনগুলো ইসরায়েলি কারখানায় তৈরি হলেও এর ইঞ্জিন ব্রিটেনের ইউএভি ইঞ্জিনস লিমিটেড নির্মিত।
আরও পড়ুন
পাকিস্তান আইএসপিআর এই হামলাকে নয়াদিল্লির আতঙ্ক ও কৌশলগত বিশৃঙ্খলার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছে, যা নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) ভারতীয় বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষতির প্রমাণ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আইএসপিআর আরও জানায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী শক্তিশালী ও পরিকল্পিত জবাব দিচ্ছে এবং শত্রুপক্ষের সকল পরিকল্পনা বানচাল করে দিচ্ছে। সফট-কিল (প্রযুক্তিগত) ও হার্ড-কিল (অস্ত্রভিত্তিক) পদক্ষেপের সমন্বয়ে আগত ড্রোনগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তবে লাহোরের ওয়ালটন ওল্ড এয়ারপোর্ট এবং বুরকির কাছে ড্রোন আঘাত হানায় চারজন সেনা আহত এবং সামরিক সম্পদের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। সংবেদনশীল এলাকায় হামলার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। জালো পার্কের কাছে একটি ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে এবং পুলিশ এলাকাটি ঘিরে রেখেছে। ওয়ালটন ও শেখুপুরায় ড্রোন কৃষি জমিতে পড়ায় কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক আহত হন। রাওয়ালপিন্ডি ও অ্যাটকে দুজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। রাওয়ালপিন্ডিতে স্টেডিয়াম রোডের কাছে একটি দোকানে ধ্বংসাবশেষ পড়ে দুজন আহত হন এবং রেস কোর্স গ্রাউন্ডের কাছে একটি আবাসিক ভবনের ওপর আরেকটি ড্রোন পড়ে। গুজরাটের পীরচাঁদ গ্রাম ও সিন্ধুর ঘোটকি জেলাতেও ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ রয়টার্সকে বলেছেন, পাকিস্তানের প্রতিশোধ ক্রমশ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে এবং পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন।