কাশ্মীরে ‘ইসরায়েলি স্টাইলে’ প্রতিশোধের শঙ্কা

কাশ্মীরে ‘ইসরায়েলি স্টাইলে’ প্রতিশোধের শঙ্কা

জম্মু ও কাশ্মীর-এর পহেলগামে বন্দুকধারীদের অতর্কিত হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটকের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আরও ১৩ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর ভারতে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার এবং গণমাধ্যম যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে ইসরায়েলের গাজা অভিযানের ন্যায় কঠোর ও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রীনগর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মনোরম পাহাড়ি এলাকা পহেলগামের এক সবুজ উপত্যকায় এই নারকীয় হামলাটি সংঘটিত হয়। অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকধারীরা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ও অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আগত পর্যটকদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, নিহতদের মধ্যে ইতালি এবং ইসরায়েলের নাগরিকও রয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিও এবং স্থিরচিত্রে দেখা যায়, হামলার শিকার হয়ে আহত ও নিহত পর্যটকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে। একইসঙ্গে, এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও স্থানীয় কাশ্মীরিদের সাহসী ভূমিকার চিত্রও উঠে এসেছে।

বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছেন স্থানীয় যুবক আদিল হুসেইন শাহ, যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে হামলাকারীর কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই বীরত্বের ফলস্বরূপ তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ শোকসন্তপ্ত শাহের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গভীর সমবেদনা জানান এবং আদিলের অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের কথা চিরদিন স্মরণীয় থাকবে বলে উল্লেখ করেন।

এই হামলার পর ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল রিপাবলিক টিভির উপস্থাপক অর্ণব গোস্বামী তার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘চূড়ান্ত সমাধান’-এর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তার এই মন্তব্যকে অনেকেই গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো দমননীতির সঙ্গে তুলনা করছেন। নিউইয়র্ক-ভিত্তিক লেখিকা সুচিত্রা বিজয়ন এই ধরনের মন্তব্যকে শুধুমাত্র উস্কানিমূলকই নয়, বরং গণহত্যার প্ররোচনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং এটিকে সহিংসতার একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা বলে উল্লেখ করেছেন। সাংবাদিক আজাদ এসা অভিযোগ করেন যে, গণমাধ্যম এবং রাজনীতিবিদরা কাশ্মীর সংকটের দীর্ঘ ও জটিল ইতিহাসকে উপেক্ষা করে কেবল হামলার দিন থেকে ঘটনার বিবরণ শুরু করছেন। তিনি আরও বলেন, গাজা সম্পর্কে যেমন বলা হয় যে ‘সবকিছু ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়নি’, তেমনি কাশ্মীর নিয়েও একই কথা প্রযোজ্য—এই অঞ্চলের ইতিহাস [ঘটনার তারিখ] থেকে শুরু হয়নি। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত আরও কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল হামলার খবর সম্প্রচারের সময় ভুক্তভোগী পরিবারদের সমালোচনামূলক প্রশ্নগুলো কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন যে, সরকারের ব্যর্থতা তুলে না ধরে বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন শহর থেকে খবর আসছে যে, কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের হোস্টেল এবং ভাড়া বাসা থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিক আহমের খান দিল্লি ও মুম্বাইসহ কয়েকটি শহরে এই ধরনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তিনি জানান, বহু কাশ্মীরি ছাত্র তাকে ফোন করে জানিয়েছে যে, তাদের বাড়িওয়ালারা নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে থাকতে দিচ্ছেন না এবং কেউ কেউ ইতোমধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই কাশ্মীর অঞ্চল নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র বিরোধ বিদ্যমান। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ করে আসছে। পাকিস্তান গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরিদের তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে, অন্যদিকে ভারত এই অঞ্চলকে তাদের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ হিসেবে দাবি করে। এই হামলার প্রেক্ষাপটে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করেছে এবং সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এই হামলায় পাকিস্তানের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আরও দেখুন 

whatsappচ্যানেল ফলো করুন

প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Gif final ezgif.com optimize