যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রো-প্যালেস্টাইন সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-কে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। গত বুধবার (২ জুলাই) অনুষ্ঠিত ভোটে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ৩৮৫ জন এমপি, বিপক্ষে ছিলেন মাত্র ২৬ জন। উল্লেখযোগ্যভাবে, মুসলিম এমপিদের মধ্যে টিউলিপসহ কয়েকজন এই প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিলেও অধিকাংশই ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন।
‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ঢুকে দুটি সামরিক বিমানে লাল রঙ ছিটিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সংগঠনটি বরাবরই ইসরায়েলি অস্ত্র উৎপাদন ও গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরোধিতা করে আসছে। এবার তাদের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করে আইনি কাঠামোয় আল-কায়েদা ও আইএসের মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে একই শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন স্বাধীন এমপি জারা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘‘একটি রঙ ছোড়ার ঘটনাকে আত্মঘাতী হামলার মতো করে দেখা আইনকে বিকৃত করার জঘন্য উদাহরণ।’’ একইভাবে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের প্রধান নির্বাহী সাচা দেশমুখ এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘‘আইনের নজিরবিহীন অপব্যবহার’’ বলে অভিহিত করেন। তাঁর মতে, সরকারের এমন পদক্ষেপ বাক-স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সংকুচিত করবে।
আরও পড়ুন
‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নিজেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। তারা দাবি করেছে, এ ধরনের দমনমূলক ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থী। সংগঠনটি ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলি অস্ত্র কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরাও যুক্তরাজ্যের এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, প্রাণহানির উদ্দেশ্য ছাড়া সম্পত্তির ক্ষতি হলে তা সন্ত্রাসবাদ হিসেবে গণ্য করা অনুচিত। তবে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াভেট কুপার বলেছেন, “সহিংসতা ও অপরাধের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কঠোর—জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
এদিকে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভোটের সময় অনেকে ভোট দিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও জানিয়েছে আলজাজিরা। কারণ, এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলে অন্য দুটি প্রকৃত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সম্ভব হতো না, যা রাজনৈতিক ও নীতিগত জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।