ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন করে মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে জানায়, ‘সেজ্জিল-২’ নামের কঠিন জ্বালানিচালিত শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে তারা ‘ট্রু প্রমিজ-৩’ নামের সামরিক অভিযানের ১৩তম ধাপ শুরু করেছে। এ হামলার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বাড়তে শুরু করেছে।
সিএনএন জানিয়েছে, বুধবার রাতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে আইআরজিসি। এর আগে ইরান ‘ফাত্তাহ’ নামে একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল, যা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করেছে বলে দাবি করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখনো এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
আরও পড়ুন
গত এক সপ্তাহ ধরে দুই দেশের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় রেখেছে এবং জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। পাল্টা হামলায় ইসরায়েলও একাধিক স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইরানি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ কারাজ ও লাভিজানে বিস্ফোরণ ঘটেছে। লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়, যার সঙ্গে আইআরজিসির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেহরান রিসার্চ সেন্টার ও টিইএসএ কারাজে অত্যাধুনিক সেন্ট্রিফিউজের রটর তৈরি ও পরীক্ষার কাজ চলছিল, যেগুলো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস জানায়, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ইরানে ৫৮৫ জন নিহত এবং প্রায় ১,৩২৬ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। যদিও ইরান সরকার সর্বশেষ নিহতের সংখ্যা জানিয়েছে ২২৪, এবং আহত ১,২৭৭ জন—তবে এরপর আর কোনো হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের ‘সেজ্জিল-২’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে দেশটি তার সামরিক সক্ষমতার ভয়াবহ দিক প্রকাশ করেছে। এই পরিস্থিতি শুধু ইসরায়েল নয়, গোটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবার চোখ এখন মধ্যপ্রাচ্যের দিকে—এই সংঘাত কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।