মালয়েশিয়ার ভিসা পাওয়ার পরও হাজারো বাংলাদেশি কর্মী শেষ মুহূর্তে দেশটিতে যেতে না পেরে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। ছয় লাখ টাকা খরচ করেও টিকিট ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না পাওয়ায় মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি নওগাঁর সাব্বির আহমেদ। বর্তমানে তিনি ঢাকায় একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করে ব্যাংকের ঋণ শোধ করছেন।
দিনাজপুরের মহসিন হোসেনও একই ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার। ফসলি জমি বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমাতে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। পরিবার-পরিজনের মুখ চাওয়া যেন তার জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা দপ্তরে ঘুরেও কেউ ফেরত পাননি খরচকৃত অর্থ।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৭৬ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় গেলেও প্রায় ১৭ হাজার বৈধ ভিসা প্রাপ্ত কর্মী যেতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর পেছনে টিকিট জটিলতা, সিন্ডিকেটভিত্তিক এজেন্সি নিয়োগ ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অনিয়ম দায়ী।
আরও পড়ুন
২০২৪ সালের ৩১ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ফের বন্ধ হলেও, নতুন করে এই বাজার চালুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার তৎপর হয়েছে। ১৪ মে মালয়েশিয়ায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এবং ২১-২২ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় পুনরায় শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার আলোচনা হয়। প্রথম দফায় ৭ হাজার ৯২৬ কর্মী নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় মালয়েশিয়া।
সিন্ডিকেট ইস্যুতে জনশক্তি রপ্তানিকারক সংগঠন বায়রার অভ্যন্তরেও দেখা দিয়েছে তীব্র দ্বন্দ্ব। এক পক্ষ সিন্ডিকেট ব্যবস্থাকে শ্রমবাজার ধ্বংসের জন্য দায়ী করছে, অপর পক্ষ তা অস্বীকার করে বলছে, দুই দেশের চুক্তিতেই নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ফলে শ্রমবাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিন্ডিকেট পদ্ধতি অব্যাহত থাকলে কর্মীদের খরচ আরও বাড়বে এবং সমস্যা আরও প্রকট হবে। রামরু চেয়ারপারসন তাসনিম সিদ্দিকী মনে করেন, মালয়েশিয়ার একক এজেন্সি বাছাইয়ের ক্ষমতা বাতিল না করলে টেকসই সমাধান আসবে না। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বচ্ছ ও ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।