গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর অনেক আওয়ামী লীগ নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। প্রায় দশ মাস পর ভারতের একটি ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম তার দেশত্যাগের পেছনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি জানান, কীভাবে চরম নিরাপত্তাহীনতা, অপহরণের হুমকি ও প্রাণভীতির মুখে তাকে গোপনে দেশ ছাড়তে হয়েছিল।
সাক্ষাৎকারে রেজাউল করিম বলেন, ঘটনার দিন তিনি সংসদ সদস্যদের বাসভবন ন্যাম ফ্ল্যাটে ছিলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও তিনি ভেবেছিলেন সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু ভোরে জানতে পারেন, ভবনে তিনি একাই আছেন এবং উত্তেজিত জনতা তার খোঁজে সেখানে পৌঁছেছে। বিদ্যুৎ বন্ধ করে ভবন খালি দেখাতে কৌশল নেওয়া হয়। এ সময় তিনি ও তার পরিবার আলো বন্ধ করে আতঙ্কে দিন কাটান।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন ছাত্রলীগের এক নেতা, যাকে তিনি অতীতে সহায়তা করেছিলেন, হঠাৎ বাসায় এসে তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি জানান, সেই নেতা তার পরিবারকে অসুস্থতার ভান করে বাইরে বের করে আনে। এরপর তারা আত্মগোপনে চলে যান। একপর্যায়ে তিনি জানান, এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করলেও সেটি নিরাপদ ছিল না, ফলে আবার বাসা পরিবর্তন করতে হয়।
আরও পড়ুন

রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, তার নিজ এলাকার ছাত্রলীগ সভাপতি ও কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে যুক্ত একটি চক্র তাকে অপহরণ ও অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। তারা তার পরিবারের সদস্যদেরও ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে তিনি স্থানীয় থানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও চক্রটি বাধা দেয়। এর মধ্যে এক বিশ্বস্ত স্টাফ তাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত তিনি জানান, প্রাণভয়ে সীমান্ত দিয়ে পালাতে বাধ্য হন। একটি কর্দামাক্ত এলাকা দিয়ে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে চার ঘণ্টার চেষ্টায় সীমান্ত পাড়ি দেন। ওপারে পৌঁছে কলকাতায় এক পরিচিত ব্যক্তির আশ্রয়ে থাকেন এবং পরে ভিসা ও পাসপোর্টসংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে অন্য একটি দেশে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
সাক্ষাৎকারে শ ম রেজাউল করিম বলেন, এই অভিজ্ঞতা এখনো তার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। তিনি বারবার আল্লাহর কুদরতের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেই ভয়াল সময় তাকে ঈশ্বরিক শক্তিই রক্ষা করেছে। এই অভিজ্ঞতা তার জীবনের এক কঠিনতম অধ্যায় হয়ে থাকবে।