জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-তে মানবপাচার সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় অভিযান শুরু করেছে। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে চার সদস্যের একটি টিম এই অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক, স্বপন কুমার রায়, রাজু আহমেদ এবং মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা।
এর আগে দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিএমইটির কিছু কর্মকর্তা ও রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের ভুয়া কাগজপত্রে বিদেশে পাঠানোর অভিযোগ উঠে আসে। “রক্ষক বিএমইটিই ভক্ষক” শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব নারী বিদেশে গিয়ে যৌন নিপীড়ন, শারীরিক নির্যাতনসহ নানা নিদারুণ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন, যা একটি সুসংগঠিত পাচারকারী চক্রের কারণে ঘটছে।
দুদকের অভিযানের পেছনে রয়েছে এসব অভিযোগের বাস্তবতা যাচাই এবং মানবপাচার চক্রের সঙ্গে বিএমইটির কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, অন্তত চারজন বিএমইটি কর্মকর্তা এবং অর্ধশতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি এই পাচার প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত। ভুয়া পাসপোর্ট, বয়স বাড়িয়ে তৈরি করা কাগজপত্র, এবং ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রে অসংখ্য অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন
এছাড়াও অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ না দিয়েই বহু নারীকে ‘প্রত্যাগত’ হিসেবে দেখিয়ে বিদেশ পাঠানো হয়েছে। পাসপোর্টে থাকা ইমার্জেন্সি কন্ট্রাক্ট নম্বর যাচাই করে দেখা গেছে, অধিকাংশ নম্বর ভুয়া কিংবা দালালের। এসব কারণে বিদেশে গিয়ে বিপদের মুখে পড়লে ভুক্তভোগীদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
ওকাপের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ হাজারেরও বেশি বিদেশফেরত নারী সহায়তা চেয়েছেন, যাদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। বিএমইটিতে লুকিয়ে থাকা এই মানবপাচার চক্র দেশের অভিবাসন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এবারের দুদক অভিযান দেশের কর্মী প্রেরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।