সৌদি আরবে কর্মরত স্বামীর পাঠানো ১৭ জন বাংলাদেশির ভিসা জটিলতার সমাধানে সহায়তা পেতে ‘জিনের বাদশা’র দরবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। স্বামীকে আর্থিক সংকট থেকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনি পড়েন প্রতারকদের ফাঁদে। বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়, ‘জৈনপুরী মা ফাতেমা’র মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। এই প্রলোভনে পড়ে ওই নারী প্রায় ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা হারান।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তথ্যে উঠে এসেছে, প্রতারক চক্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টিভিতে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের দুঃস্থতা ও দুর্বলতার সুযোগ নেয়। প্রথমে বলা হয়, কোনো খরচ নেই। পরে একের পর এক অজুহাত তুলে ধাপে ধাপে অর্থ আদায় করা হয়। কখনো জিন পরীকে পবিত্র করার জন্য দুধ, কখনো বলি দেওয়ার জন্য টাকা, আবার কখনো ‘রত্নের আংটি’ কেনার নামে প্রতারণা চলে।
রোববার (২৫ মে) পিবিআইয়ের আগারগাঁও কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. এনায়েত হোসেন মান্নান। তিনি জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিন থানা এলাকা থেকে তিন প্রতারক—রাকিব, রাকিব মোল্লা ও আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণা চালিয়ে আসছিল।
আরও পড়ুন
প্রতারকদের অন্যতম কৌশল ছিল ভয়েস চেঞ্জিং অ্যাপের মাধ্যমে পুরুষ সদস্যদের নারী কণ্ঠে কথা বলিয়ে ‘জৈনপুরী মা’র চরিত্রে অভিনয় করানো। আবার কখনো জিনের ভয়াল কণ্ঠস্বর বা ছবি পাঠিয়ে ভিকটিমকে আতঙ্কিত করে অর্থ আদায় করা হতো। তারা ভুয়া নামে সিমকার্ড নিবন্ধন করে বিকাশ-নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন পরিচালনা করত।
পিবিআই জানায়, চক্রটির বিরুদ্ধে তদন্তকালে ১৫০ পাতার বিকাশ লেনদেন বিবরণী ও পাঁচটি প্রধান লেনদেন অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলোর মাধ্যমে কোটি টাকার বেশি অর্থ লেনদেন হয়েছে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, চক্রটি ২০১৯ সাল থেকে অন্তত সাত বছর ধরে সারা দেশে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে একই কায়দায় প্রতারণা করে চলেছে। পিবিআই বলেছে, এই ধরনের জিন-তান্ত্রিক ফাঁদ থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সন্দেহজনক বিজ্ঞাপন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।