সৌদি আরবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) শাসনের বিরোধিতায় তরুণদের মধ্যে এক ব্যতিক্রমী আন্দোলন শুরু হয়েছে। ‘মাস্ট ইউথ মুভমেন্ট’ নামের এই তরুণ নেতৃত্বাধীন প্রচার শুরু হয় জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকে। ধীরে ধীরে এটি ছড়িয়ে পড়েছে এক্স (সাবেক টুইটার), ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে।
আন্দোলনকারীরা নিরাপত্তার কারণে মুখ ও পরিচয় গোপন রেখে ভিডিও প্রকাশ করছেন। এসব ভিডিওতে কণ্ঠ পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা এমবিএস-এর নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করছেন। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে—নাগরিক স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং উন্নয়নের প্রকৃত ধারা থেকে সরে গিয়ে বিশাল মেগা প্রকল্প ও পশ্চিমা ধাঁচের বিনোদনমূলক উদ্যোগে সরকারের অতিরিক্ত মনোযোগ।
সম্প্রতি দেশটিতে আয়োজিত কনসার্ট, নৃত্যানুষ্ঠান এবং ‘এক্সপার্ট মিক্স’ নামের বিনোদন ইভেন্টগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের মতে, এসব কার্যক্রম সৌদি সমাজের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের পরিপন্থী। পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব থেকে মুসলিমদের পবিত্র দুই নগরী, মক্কা ও মদিনাকে রক্ষার দাবিও তুলছেন তারা।
আরও পড়ুন
এই তরুণদের আন্দোলন ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তাদের মতে, অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখলেও সৌদি সরকারের কড়া নজরদারির আওতায় থেকে তারা এখনও নিরাপদ নন। অতীতে এমন নজির রয়েছে—২০১৭ সালে এমবিএস ক্ষমতায় আসার পর সামাজিক মাধ্যমে মতপ্রকাশের কারণে বহু নাগরিককে গ্রেফতার ও কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, সরকারের পক্ষপাতীরা দাবি করছেন, এই আন্দোলন আসলে বিদেশে অবস্থানরত কিছু ব্যক্তির চক্রান্ত, যারা সৌদির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাইছে। তবে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওগুলোর ব্যাপক প্রচার এবং তরুণদের জোরালো অবস্থান স্পষ্ট করছে, শাসনব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ জনগণের অসন্তোষ দিন দিন বেড়ে চলেছে।
তরুণ প্রজন্মের এমন প্রতিবাদ এবং সামাজিক মাধ্যমে এর বিস্তার সৌদি আরবের রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ ঘটনা ভবিষ্যতে দেশটির শাসনপ্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।