ভারত থেকে এ বছর যারা বেসরকারিভাবে হজ পালনের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, তাদের জন্য একটি বড় দুঃসংবাদ। দেশটির সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই কোটার হজযাত্রীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে মাত্র ২০ শতাংশের যাত্রা নিশ্চিত করা হবে। এর ফলে, ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৮০ শতাংশ হজযাত্রীই ২০২৫ সালের হজে যেতে পারবেন না।
হিন্দুস্তান টাইমস ও ইন্ডিয়া ডট কমের মতো ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, বেসরকারি ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে ৫২ হাজারের বেশি ভারতীয় হজ পালনের জন্য বুকিং করেছিলেন। তবে সম্প্রতি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই কোটার মাত্র ২০ শতাংশের যাত্রা প্রথমে নিশ্চিত করা হবে। কম্বাইন্ড হজ গ্রুপ অর্গানাইজার্সের (সিএইচজিও) অধীনে নিবন্ধিত বিপুল সংখ্যক মানুষ, প্রায় ৮০ শতাংশ, সম্ভবত এ বছর হজ পালন করতে পারবেন না।
এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নুসুক পোর্টালে অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেওয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে। নুসুক হজযাত্রীদের জন্য চুক্তি ও পরিষেবা চূড়ান্ত করার একটি বাধ্যতামূলক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। সৌদি কর্তৃপক্ষ মিনা জোন—১ ও ২ বাতিল করেছে, যা সিএইচজিওদের বরাদ্দ করা হয়েছিল। এর মূল কারণ ছিল অর্থ পরিশোধে বিলম্ব এবং পরিষেবা চুক্তি চূড়ান্ত না করা। এছাড়া বাকি জোনগুলোও (৩, ৪ ও ৫) আটকে রাখা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আরও পড়ুন
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই সমস্যার জন্য বেসরকারি ট্যুর অপারেটরদের দায়ী করেছে। মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, প্রতিটি সিএইচজিওর নিজস্ব উদ্যোগে নুসুক পোর্টালে পরিষেবা ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার কথা ছিল। তবে তাদের অধিকাংশই সময়মতো চুক্তি আপলোড করতে বা অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, সৌদি কর্তৃপক্ষ অ্যাক্সেস বাতিল করে এবং ভারতীয় বেসরকারি তীর্থযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত সমস্ত জোন স্থগিত করে দেয়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারি ট্যুর অপারেটর এই ত্রুটির জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। তার মতে, গত বছর থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষ অর্থ পরিশোধের নিয়মে পরিবর্তন এনেছে। এখন বেসরকারি অপারেটরদের পেমেন্ট সরকারের মাধ্যমে করতে হয়, এবং সরকার সেই অর্থ সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। ওই অপারেটর আরও জানান, বেশিরভাগ বেসরকারি অপারেটর সময়মতো সরকারের কাছে তাদের অর্থ জমা দিয়েছিলেন, যদিও কয়েকজন হয়তো দেরি করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের আগে বেসরকারি অপারেটররা সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষকে অর্থ পরিশোধ করতে পারতেন। তার অভিযোগ, সরকার সকল অপারেটরের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছে এবং অর্থ পরিশোধে বিলম্ব করেছে, যার ফলে সৌদি কর্তৃপক্ষের পেমেন্ট চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেছে। যারা সময়মতো পেমেন্ট সম্পন্ন করেছিলেন, তারাও সরকারের এই অবহেলার কারণে এখন সমস্যায় পড়েছেন।
অন্যদিকে, একটি ইতিবাচক খবর হলো সৌদি আরব নুসুক পোর্টাল পুনরায় খুলতে রাজি হয়েছে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত আসে। তবে এই পোর্টাল কেবল একটি সংক্ষিপ্ত এবং অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা হবে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে সিএইচজিওদের তাদের তীর্থযাত্রীদের জন্য পরিষেবা চুক্তি আপলোড করতে এবং আবাসন, পরিবহন ও লজিস্টিক ব্যবস্থা চূড়ান্ত করতে হবে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করা হয়েছে যে, মিনায় জোন ও ক্যাম্প সীমিত থাকায় বরাদ্দ রিয়েল-টাইম এবং আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে করা হবে। কতগুলো তাঁবু বা জোন পাওয়া যাবে, অথবা সেগুলো কোন নির্দিষ্ট এলাকায় অবস্থিত হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।