মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার শুরু থেকেই ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার কূটনীতি গ্রহণ করেন মোহাম্মদ মুইজ্জু। বেইজিংয়ের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতামূলক চুক্তি সইয়ের চেষ্টাও করেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরের শুরুতে (জানুয়ারি) ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)–এর পক্ষে কাজ করা এজেন্টরা ক্ষমতা থেকে মুইজ্জুকে সরিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা নিয়ে মালদ্বীপের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে গোপনে আলোচনা শুরু করেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একটি পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেন তারা। এই আলোচনায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে এমন বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।
মুইজ্জু ২০২৩ সালের শেষ দিকে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের আধিপত্যবাদী পররাষ্ট্রনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনকার নবনির্বাচিত মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট জ্বালাময়ী ভাষণে তার দেশ থেকে ভারতীয় সৈন্যদের বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। তার অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল এটি। ততদিনে মালদ্বীপের নাগরিকদের মধ্যেও ভারতবিরোধিতা তীব্র রূপ ধারণ করেছে। মানুষের এই মনোভাবকেই তিনি ভোটের রাজনীতিতে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। তিনি নির্বাচনে মোদিপন্থি প্রার্থীকে ধরাশায়ী করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন
সম্প্রতি ‘ডেমোক্রেটিক রিনিউয়াল ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক একটি অভ্যন্তরীণ গোপন নথি উদ্ধার করে ওয়াশিংটন পোস্ট। সেই নথিতে দেখা গেছে, মালদ্বীপের বিরোধী রাজনীতিকেরা মুইজ্জুর নিজ দলের সদস্যসহ ৪০ আইনপ্রণেতাকে ঘুষ দিয়ে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রস্তাব দেন। নথিতে আরও দেখা গেছে, মুইজ্জুর উৎখাত নিশ্চিত করতে ১০ জন ঊর্ধ্বতন সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং তিনটি প্রভাবশালী অপরাধী চক্রকে অর্থ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। বিভিন্ন পক্ষকে ঘুষ দেয়ার জন্য র–এর এজেন্টরা ৮ কোটি ৭০ লাখ মালদ্বীপি রুপিয়া (প্রায় ৬০ লাখ মার্কিন ডলার) সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিল। মালদ্বীপের দুজন সরকারি কর্মকর্তার মতে, এই অর্থ ভারতের কাছ থেকে সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল। খবর ইন্ডিয়া টুডের।
মাসব্যাপী গোপন আলোচনা সত্ত্বেও, ষড়যন্ত্রকারীরা মুইজ্জুকে অভিশংসনের জন্য যথেষ্ট সমর্থন জোরদারে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত ভারত মুইজ্জুকে উৎখাতের এই পরিকল্পনায় সমর্থন বা অর্থায়নের দিকে আর এগোয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুইজ্জুকে অপসারণের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলেও এই ঘটনা এবং এর পটভূমি ভারতের সঙ্গে চীনের একটি বৃহত্তর, ছায়া প্রতিযোগিতার একটি বিরল দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। এশিয়ার কৌশলগত এলাকাগুলোতে এবং এর আশপাশের জলসীমায় প্রভাব বিস্তারের যে তীব্র প্রতিযোগিতা বেইজিং ও নয়াদিল্লির মধ্যে চলছে সেটি এই ঘটনায় আরও স্পষ্ট।
এই প্রতিযোগিতা বিশেষত ভারত মহাসাগরের ছোট ছোট দেশগুলোতে প্রসারিত হয়েছে, যেখানে এশিয়া মহাদেশের দুটি বৃহত্তম শক্তি তাদের পছন্দের রাজনীতিকদের সমর্থন করতে উদারহস্তে ঋণ, অবকাঠামো প্রকল্প এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের সাহায্য সহযোগিতা প্রকাশ্যে এবং গোপনে দুভাবেই চলছে।